মাথা ঘোরা ও চোখে ঝাপসা দেখার কারন কি

মাথা ঘোরা ও চোখে ঝাপসা দেখার কারন কি


মাথা ঘুরা ও চোখে ঝাপসা দেখা মেডিকেলে ভাষায় এটিকে ভার্টিগো বলে। মাথা ঘুরাও চোখে ঝাপসা দেখা দিয়ে থাকে চলাফেরার সময় যখন  আপনার ভারসাম্য ঠিক থাকে না। তখন ভারসাম্য হীনতার কারণে হঠাৎ করে মাথা ঘুরানো, চোখে ঝাপসা দেখা থেকে শুরু করে মারাত্মক রকম মাথা ঘুরানো দেখা দেয়।  সঙ্গে সঙ্গে বমি ভাব হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের সমস্যা প্রকাশ পেতে পারে।

 

এটা কোন কোন ক্ষেত্রে কয়েক সেকেন্ডের জন্য হয়ে থাকে আবার কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। আবার অনেক সময় এটি দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ফলে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে বাধাগ্রস্ত হয়।



মানব শরীরের ভারসাম্য কিছু অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের এতগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে প্রদান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হলো  অন্তঃকর্ণ। কানের দুটো কাজ একটা হলো শ্রবণ সেটি ককলিয়া  প্রক্রিয়া দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।  আর অন্যটি হলো শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা বা ঠিক করা যেটা ভেস্টিবুলার আর্গান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত।


আমাদের অন্তঃকর্ণের পঞ্চাশ  ভাগেরও বেশি এলাকা জুড়ে দেশটি ভেস্টিবুল  ও সেমি সার্কুলার কেনাল  অবস্থিত। এর একমাত্র কাজ হল মানব শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখা। এর সাথে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে চোখ, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট, বিশেষত ঘাড়ের জয়েন্ট , আমাদের শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই চোখ, কান ও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট  থেকে পাওয়া সিগন্যালগুলো মস্তিষ্কের সেরিবেলামে পৌঁছে থাকে এতে করে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা হয়ে থাকে। এই অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে যে কোন একটিতে সমস্যা দেখা দিলে মানুষ তার ভারসাম্যহীনতায় ভুগতে থাকে অথবা মাথা ঘুরানোর ও চোখে ঝাপসা দেখার অনুভূতি হতে থাকে।


মাথা ঘুরানোর  কারণগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। মস্তিষ্কের কারনে যদি হয়ে থাকে তাহলে মাথা ঘুরানোর সাথে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস, মস্তিষ্কে ব্যথা,চেতনা শক্তি ঠিকমতো কাজ না করা বা অসচেতনতা, বুদ্ধিমত্তা, শ্রবণশক্তি ঠিকমতো কাজ না করা এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের রোগীদের নিউরোলজিস্ট ডাক্তার দেখাবেন।  কারণ এর সাথে মস্তিষ্কের কিছু অংশের সাথে কর্মতাহীনতা জড়িয়ে থাকে।


ফলে এ রোগ সাধারণত সম্পূর্ণভাবে সেরে ওঠেনা। অনেক সময় ঘাড়ের আর্থাইটিসের কারণে অথবা মস্তিষ্কের রক্তনালী ভেতরে চর্বি জমে যাওয়ায় রক্তনালীর ছোট হয়ে যায় এর ফলে রক্তনালীর ভিতরে রক্ত জমাট বাড়তে থাকে পরবর্তীতে মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল হ্রাস পায় এবং তা থেকেও মাথা ঘুরাতে  ও চোখে ঝাপসা দেখতে পারে। এছাড়াও কানের সমস্যা দিয়েও মাথা ঘুরাতে পারে। 


আমাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য অন্তঃকর্ণের ভেস্টিবুল ও সেমি সার্কুলার ক্যানাল প্রধান অঙ্গ। অন্ত:কর্নের মধ্যে বহি: কর্ণ ও মধ্য:কণ্য অনেক সমস্যা থেকে কানের ভেতরে ভারসাম্য রক্ষা করার পদ্ধতি সমস্যা হতে পারে তারপর মাথা ঘুরাতে পারে।


কানের সমস্যা থেকে মাথা ঘুরানো যেমন: কানের মধ্যে ইনফেকশন, কানের ভেতরে ময়লা জমে গেলে,  মধ্যকর্নের ইনফেকশন যা নাকের পিছন দিয়ে কানের ভিতরে যায়, কানের পর্দা না থাকা, ঘন ঘন কান পাকা, কানের ভিতর পানি জমে থাকা, অতিরিক্ত সর্দি কাশি হওয়া, নাকের হাড্ডি বাঁকা থাকলে, খায় সাইনাসের দীর্ঘদিন ইনফেকশন।


এছাড়াও অন্তকর্নের কিছু কিছু সমস্যা কারণে মাথা ঘুরতে পারে।  তার মধ্যে প্রধান হলো অন্তঃ কর্নের ভিতরে ভাইরাল ইনফেকশন। এটি একটি ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে ভাইরাসটি হল কমান্ড কোর অথবা প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। চিকেন পক্স মিজেলস থেকেও কানের ভাইরাল ইনফেকশন হতে পারে। 


কান ও কানের আশেপাশের কিছু জটিল রোগের জন্য মাথা ঘুরতে পারে ও চোখে ঝাপসা দেখতেপারে যেমন:


*কানের ভিতরে হাড় শক্ত হয়ে গেলে। 

* প্রেসার বেড়ে গেলে মেনিয়ার্স ডিজিজ-অন্তঃকর্ণের। 

* টিউমার বা ক্যান্সার হতে পারে কানের ভিতরে। 

* নাকের পিছনের ক্যান্সার। 


মাথা ঘুরালে  যা করণীয়


* বেশি পরিমাণে মাথা ঘোরানো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে একা একা চলাফেরা করবেন না। এ অবস্থায় আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং অন্যান্য কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। 


*বারবার বমি হয়ে থাকলে শরীরের ভেতরের পুষ্টি লবণ ও পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এমত অবস্থায় স্টিমিটিল বা সিনারন জাতীয় ট্যাবলেট খাবেন। দিনে তিনটি করে খেতে হবে অথবা প্রয়োজনার্থে আপনি  স্টিমিটিল  ইঞ্জেকশনও দিতে পারেন।

এরপরও সমস্যার উন্নতি দেখা না দিলে আপনাকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


  


 মাথা ঘোরার কারণ ও প্রতিকার


কারণ:

হঠাৎ করে মাথা ঘোরার কারণে অনেকে পড়ে যেতে পারে দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।  এটাকে তুচ্ছ বা অবহেলা করা যাবে না।  বিভিন্ন কারণেই মাথা ঘুরতে পারে বিশেষ করে কানের ভেতর ভেস্টিবুলোককলিয়ার নামক স্নায়ুতে  সমস্যার কারণে বেশি মাথা ঘুরে থাকে। 


যে কারণে মাথা ঘুরার কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেগুলো হলো দুশ্চিন্তে করা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অন্তঃকর্ণের  রক্তনালীর অস্বাভাবিকতা, ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মেনিয়ারস রোগ, দৃষ্টিগত সমস্যা, অনেক উপরে উঠে নিচের দিক তাকালে, চলন্ত ট্রেন বা গাড়িতে থেকে প্লাটফর্মের দিকে তাকালে মাথা ঘুরে থাকে অনেকেরই।


উচ্চ রক্তচাপ মাথার পিছনে ঘাড়ের রক্তনালিতে রক্ত সরবরাহ করতে বাধা পেলে, মস্তিষ্কের নিচের দিকে, টিউমার মাল্টিপল স্লেরসিস রোগ, ভাইরাসজনিত ভেস্টিবুলার, নিউরাইটিস, মিনিয়ারস রোগ মধ্যবয়সীদের, আঘাতের কারণে পেট্রাস হাড়ের  ক্ষয় ইত্যাদি কারণেও মাথা ঘুরতে পারে। তাছাড়া শরীরের পানির পরিমাণ কমে গেলে মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দেয়। তার সাথে কানের ভেতরে শব্দ হতে পারে।


প্রতিকার:

হঠাৎ করে মাথা ঘুরে উঠলে যে কোন কিছু একটা আঁকড়ে ধরে বসে পড়াই ভালো। যাদের বিনাইন পজিশনাল ভার্টিগো সমস্যা রয়েছে বা হঠাৎ ঘাড় বা মাথার অবস্থান পরিবর্তন করলে তাদের মাথা ব্যথা করা শুরু হয়।  তারা রাতে ঘুমানোর সময় পাস হয়ে  ফিরে না শুয়ে চিৎ হয়ে একটু উঁচু বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমাবেন। 


যে সমস্ত কাজ করলে আপনার মাথা ঘোরার অনুভূতি হতে পারে সে সমস্ত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন চোখ বন্ধ করে রাখুন সহজভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস  নেন। গাড়ি চালানো অবস্থায় মাথা ব্যাথার অনুভূতি উঠে থাকলে গাড়ি ব্রেক করে থেমে পড়ুন।শুয়ে পড়ুন পাশের আসনে। সাধ্যের চেয়ে বেশি মানসিক চিন্তা ও শারীরিক পরিশ্রম করতে যাবেন না।


আমরা সাধারণত অনেকেই অনেক সময় ধরে খালি পেটে  থাকি কিন্তু এটি কখনোই করা যাবে না। অতিরিক্ত কাজের চাপে খাবার না খেলে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা কমে গেলে তাৎক্ষণিক কিছু খেয়ে নিন। এমত অবস্থায় তরল জাতীয় পান করুন। ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকেমাথা ব্যাথা উপসর্গ তৈরি হতে পারে। এরকম কোন ওষুধ গ্রহণ করে থাকলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

 

অবহেলা করা যাবে না


কখনো যদি মাঝে মাঝে মাথা ঝিমঝিম করে থাকে তাহলে অবহেলা করবেন না। মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা কিভাবে শুরু হয়, হঠাৎ করেই, শুরু হয় কিনা, কতক্ষণ থাকে, কানের উপসর্গ আছে কিনা, অচেতন হয়ে পড়েন কিনা, এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন কারণ এগুলো চিকিৎসকে জানাতে হবে তাহলেই আপনার খুব দ্রুত সঠিক রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হবে। 



মাথা ঘোরার ঘরোয়া প্রতিকার


মাথা ঘোরা এটি একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। এটি একটি ইংরেজি আভিধানিক ভাষায়   বলে ভার্টিগো।এটি এমন একটি সমস্যা যেখানে মনে হয় আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই করছেন বা তার আশেপাশে যা কিছুই আছে না কেন তা সব নিয়েই ঘুরতেছে। মাথা তোলা সম্ভবই হচ্ছে না এরকম সমস্যা হয়ে থাকে অনেকেরই। মাথা ঘোরার চিকিৎসা হয়ে থাকে মাথা ঘোরার ধারার উপর নির্ভর করে। নিম্নের মাথা ঘোরার ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে দেয়া হলো:


*হঠাৎ করে যদি মাথা ঘোরা শুরু করে তাহলে যে কাজটি করতেছিলেন সেই কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। চিত হয়ে শুয়ে চোখ দুটো বন্ধ করুন।  সাধারণভাবে শ্বাস নিন এবং সাহায্যর জন্য কাউকে ডাক দিন।


*গাড়ি চালানোর সময় কখনো যদি মাথা ঘোরানোর অনুভব জেগে ওঠে তাহলে পা ব্রেকের উপর রাখুন এবং থেমে পড়ুন।


* যাদের মাথা ঘোরানো সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। ভালো পরিবেশে গিয়ে কাটানো শিখতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম করুন।

 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url