জমির যাকাতের হিসাব এবং অন্যান্য সম্পত্তির জাকাতের হিসাব
প্রিয় ভিউয়ার্স আজকে এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে জানানো হবে জমির যাকাতের হিসাব ও অন্যান্য সম্পত্তির উপর যাকাতের হিসাব ও বিষয়। আমরা মুসলিম ধর্মের অনুসারীরা যাকাত দিয়ে থাকি কিন্তু অনেকে জানিনা জমির যাকাতের হিসাব এবং অন্যান্য সম্পত্তির জাকাতের হিসাব সম্পর্কে। তাই আর দেরি না করে চলুন এবার শুরু করা যাক।
জমির যাকাতের হিসাব এবং অন্যান্য সম্পত্তির জাকাতের হিসাব
ইসলাম ধর্ম মানবতার ধর্ম। পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হল ইসলাম। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি। যাকাত হলো ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য অর্জিত হয়। ধনীদের যাকাত প্রদান দ্বীন প্রতিষ্ঠাতার অংশ। এ কথার অর্থ হল যে ব্যক্তি ইসলামের এই তৃতীয় স্তম্ভের দায়িত্ব নিয়েছেন। সে যেন দিন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করতেছেন।
যাকাতের অর্থ বরকতের নিশ্চয়তা দেয় ও যাকাত ধনীদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে। দরিদ্র, হতদরিদ্র অভাবে পথিক ও অভাবগ্রস্তদের খেয়াল রাখে। যাকাত গরিবদের অধিকার। অর্থাৎ ধনীদের সম্পদের মাধ্যমেই গরিবদের নিশ্চিত একটি অধিকার। আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন যে, "একজন ভিক্ষুক তার সম্পদ থেকে বঞ্চিত হতে পারে এবং তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।" (সূরা জারিয়াত, আয়াত ১৯) .
যাকাত দেয়ার জন্য আটটি বিভাগ রয়েছে। আজ এখানে যেসব আর্থিক সম্পদ গুলোকে যাকাত দিতে হবে না সে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
১.নিজস্ব বসবাসকৃত জমির উপর যাকাতের হিসাব
বসবাসের উদ্দেশ্যে বা ভাড়া নেয়ার উদ্দেশ্যে নির্মিত বা ক্রয় বাড়ি, দালান বা অ্যাপার্টমেন্ট এগুলোর উপর যাকাত আসে না। যদি একই উদ্দেশ্যে জমি ক্রয় করা হয় এবং জমিটির ফসল উৎপাদনের জন্য চাষাবাদ এর জন্য হয়, অথবা যদি জমিতে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়, যা পরবর্তীতে বসবাস করা যায় বা ভাড়া দেয়া যায়, তাহলে তার উপর যাকাত আসবে না।
কিন্তু এসবের খাজনা থেকে উপার্জিত অর্থের উপর যাকাত দিতে হবে। তবে জমিটি কাজকর্ম করার জন্য ক্রয় করা হয়, বিক্রি করা হয় বা একটি থাকার ঘর তৈরি করা হয়, তাহলে এ সমস্ত মূল্যের হিসেবের উপর যাকাত দিতে হবে।
২.গৃহস্থালীর আসবাবপত্র হিসাব
গৃহস্থালীর আসবাবপত্রের উপর যাকাত আসে না। যেমন: জামাকাপড়, থালা-বাসন, কাটলারি, রেফ্রিজারেটর ক্যাবিনেট, শোকেস, পড়ার টেবিল, ওয়াশিং মেশিন, বই ইত্যাদির ওপর যাকাত নেই। ঘরের আসবাবপত্র কম ব্যবহার করা হোক বা বেশি হোক তাতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু এক্ষেত্রে কেউ যদি ঘরের কিছু আসবাবপত্র বিক্রি করে কিছু অর্থ সাশ্রয়ের নিয়ত করে তাহলে তার মূল্য গণনা করতে হবে যাকাত।
৩.শিল্প-কারখানার হিসাব
শিল্প কারখানার ব্যবহার যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, কারখানায় ব্যবহৃত গাড়ি, আসবাবপত্র, ইত্যাদির মূল্যের উপর যাকাত আবশ্যক নয়। যেসব শিল্প থেকে উদৃষ্ট শিল্প তৈরি করা হয় সেসব শিল্পী সঞ্চিত উৎপাদিত পণ্য ও পণ্যের ও কাঁচামালের মূল্যের উপর যাকাত দেয়া আবশ্যক।
৪.পেশাজীবীদের হিসাব
পেশাজীবীদের যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে যেভাবে যাকাত দিতে হবে যেমন: খামারের ট্রাক্টর, ডাক্তারের যন্ত্রপাতি, নির্মাণ খনন যন্ত্র, প্রকৌশলের যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদির উপর যাকাত দিতে হয় না বা যাকাত আসে না। তবে পেশাজীবী কৃষকদের আয় থেকে পণ্যের উপর ঊষার নির্ধারণ করা হয়। তবে, পেশাজীবীদের পেশা থেকে অর্জিত বা উপার্জিত অর্থ অন্যান্য সম্পদ এবং যাকাত আদায়ের সাথে হিসাব করতে হবে।
৫.যানবাহনের হিসাব
যা ভাড়া বা অর্জিত যেমনঃ অটোরিক্সা, সাইকেল বাস, ট্রাক ট্র, াক শিশুদের জন্য ট্যাক্সি, নৌকা, এস্টিমার, এয়ারপ্লেন, ইত্যাদির মূল্যের উপর যাকাত দিতে হয় না। কিন্তু একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে এসব সম্পদ থেকে বা যানবাহন থেকে উপার্জিত অর্থের উপর যাকাত দেয়া ফরজ। একইভাবে, যদি কোন ব্যক্তি বিক্রয় নিয়তে এসব যানবাহন ক্রয় বা মজুদ করে তাহলে তাদের উপর যাকাত আদায় করতে হবে।
৬.হীরা ও স্বর্ণালংকারের হিসাব
যদি একজন ব্যক্তির নিকটে হীরা, মুক্ত, স্বর্ণ, পান্না, চুন্নু, এবং অন্যান্য মডেল থাকে যা ব্যবহার উদ্দেশ্যে এবং সেগুলি ব্যবহৃত হয় তবে সেসব মূল্যের জন্য যাকাত আবশ্যক নয়। তবে এই সম্পদ গুলি পুঞ্জিভূত সম্পাদ হিসাবে ধরে রাখা হয়, যা প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করা যেতে পারে, বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মজুদ রাখা যেতে পারে, তাহলে এসব সম্পদের মূল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে। (জাওয়াহির আল-ফতওয়া, প্রথম খণ্ড)
৭.সরকারি ও বেসরকারি তহবিল হিসাব
জিপিএফ বা রাষ্ট্রীয় ভবিষ্যৎ তহবিল হাতে না থাকায় তার উপর যাকাত আসে না। সেক্ষেত্রে কর্মচারীকে তার কাজের সময় পারিবারিক সুরক্ষা, তহবিলের আমানত থেকে স্বেচ্ছায় যা কাটবে তার উপর যাকাত আদায় করতে হবে, সে তা পেয়ে থাকেন বা না পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে সরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ব্যাক্তিরাও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা থেকে যাকাত আদায় করতে হবে, তা যদি পেয়ে থাকেন বা না পেয়ে থাকেন। অনুরূপভাবে, যদি কোন বীমা কোম্পানি রাষ্ট্রীয় জিপিএফ এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করে থাকে তাহলে অবশ্যই নির্দিষ্ট সম্পদের উপর যাকাত আদায় করতে হবে।(ইহসান আল-ফতওয়া, ৪র্থ খণ্ড)
৮.অপ্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানহীন মানুষের হিসাব
পাগল বা যুবকদের টাকায় যাকাত আসে না। যদি কোন ব্যক্তির নিকট টাকা পাওনা থাকে এবং তা আদায় বা ফেরত পাওয়ার কোন আশা না থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। যদি কয়েক বছর পরে বা হতাশ হওয়ার পর যদি টাকা ফেরত দেওয়া হয় তাহলে বিগত কয়েক বছর ধরে যে পরিমাণ যাকাত দেওয়া নি তা হিসাব করে আদায় করতে হবে। অর্থাৎ যে টাকা পাওয়ার কোন আশা ছিল না সে টাকা পাওয়ার পর তা সে কয় বছরের হিসাব-নিকাশ করে যাকাত দিতে হবে ।
উল্লেখিত সম্পদের উপর যাকাত আদায় হয় না। তবে এ ধরনের সম্পদ ধারণের উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে যাকাত আদায় করতে হবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ যাকাতের মাধ্যমে সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করুন। বিশ্বস্ত!
শেষ কথা
যাকাত হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়তম স্তম্ভ। একজন মুসলিম হিসেবে যাকাত আদায় করা ফরজ। তাই আমরা যাকাতের দিকে মুসলিম হিসাবে বিশেষ খেয়াল রাখবো। কারণ যাকাতের হিসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় না করে থাকলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে পরকালে। ইনশাল্লাহ আমরা সবাই ঠিকমতো যাকাত আদায় করব। এছাড়াও অন্যান্য সব তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করুন অথবা ওয়েবসাইটের নিচে গিয়ে কমেন্ট করুন। সবাই ভাল থাকেন সুস্থ থাকেন সঠিকভাবে যাকাত আদায় করেন সেই দোয়া কামনা করি। ধন্যবাদ।