ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে

ক্যান্সার একটি আতঙ্কের নাম।  অনেকেই ক্যান্সারকে একটি মারাত্মক রোগ হিসেবে আখ্যায়িত দিয়ে থাকে। তবে সব ধরনের ক্যান্সার মারাত্মক নয়। তাই কোন ব্যক্তির  যদি ক্যান্সার রোগ শনাক্ত করা হয় তারপর আত্মীয় স্বজন সবাই  চিন্তিত হয়ে পড়ে। একজন প্যাথলজিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ভাষ্যমতে সাইটো প্যাথলজি ও হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা করে ক্যান্সার রোগ নির্ণয় করা হয়। রোগী ও রোগীর আত্মীয় স্বজন টেস্টের রিপোর্ট নেয়ার সময় ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে থাকে কি রোগ ধরা পড়লো। তখন ক্যান্সার রোগের কথা শুনলে কেউ কেউ অনেকক্ষণ থম মেরে থাকে। পরবর্তীতে জিজ্ঞেস করে থাকে যে ক্যান্সার কোন স্টেজে আছে? অথবা কতদিন বাঁচতে পারে? কতটুকু বাঁচার সম্ভাবনা অথবা এর চিকিৎসা আদৌ আছে কি?

ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে

কতদিন বেঁচে থাকবে তার নির্ভর করে অনেক কিছুর উপর। কারণ হায়াত মউত  আল্লাহর হাতে তারা শুধু মাত্র রোগের চিকিৎসাই করে থাকেন। অনেক চিকিৎসকরা বলে থাকেন যে চিকিৎসা করে দেখা গেছে অনেক রোগী আল্লাহর অশেষ রহমতে ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে গিয়েছে। ক্যান্সার রোগী কত দিন বাঁচবে এটি মূলত ক্যান্সার হবার স্থান, ক্যান্সারের ধরন, ক্লিনিক্যাল স্টেজ চিকিৎসার  ধরন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে বলা যায়।



অর্থাৎ রোগীর পরিণতির  উপর সবকিছু নির্ভর করে। তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী কতদিন কত দিন বাঁচবে এমন কথা কোন ডাক্তার নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেন না। অনেক সময় মুখরোচক গল্পে শোনা যায় এমন   '' আমার এক মামাতো ভাইয়ের ক্যান্সার হয়েছিল ডাক্তার বলে দিয়েছিল রোগী মাত্র আর ২৮ দিন বাঁচবে  যা খাওয়ার তাই খাওয়াইয়া দিন। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? কোন ধরনের চিকিৎসা ছাড়াই রোগী পাঁচ বছর ধরে বেঁচে আছে।" শুনতে অনেকটা চমক মনে হলেও এটির  বাস্তবতা নেই।তবে অনেকেই এমন ধরনের আলাপ শুনতে ভালই পছন্দ করেন।

 


ক্যান্সার হলে রোগী কি সত্যি মারা যায়। অনেকে এরকম প্রশ্ন করে থাকেন। তার উত্তরে বলা হয়ে থাকে যে ক্যান্সার হলো শরীরের একটি পরগাছার মতন। ক্যান্সার সাধারণত হয়ে থাকে মানবদেহের স্বাভাবিক কোষ কোন কারণে কোনভাবে পরিবর্তন হয়ে ক্যান্সারের কোষে রূপান্তরিত হয়।পরবর্তীতে এই একটি কোষ থেকে দুই ভাগে ভাগ হয়ে দুইটা, চারটা,, ১৬টা ৬৪ টা, এভাবে অসংখ্যকোষ তৈরি হয়ে টিউমারের রূপ ধারণ করে। এভাবেই স্বাভাবিক কোষ থেকে ক্যান্সারের কোষে রূপান্তরিত হয়। প্রথম ক্যান্সারে আক্রান্ত কষ্টি উঠিয়ে নিলেও ক্যান্সার কোষ তার নিজস্ব ক্ষমতার বলে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

 


ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যান্সারের সেল মেরে ফেলা যায়। ফলে সাধারণ কোষগুলোর মৃত্যু ঘটে।ক্যান্সারের আক্রান্ত কোষ গুলো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।  আস্তে আস্তে বিস্তৃত হতে থাকে। যাকে বাসা বাধা বলা হয়। শরীরের পুষ্টিতে বাধাগ্রস্থ করে। এর ফলেরোগী আস্তে আস্তে রুগ্ন হতে থাকে। আক্রান্ত কোষ থেকে সাইটোকাইন নিঃসৃত হয়ে রোগীর খাবারের অরুচি করে তোলে ফলে ক্ষুধা মন্দ ভাব দেখা দেয় ও ভালো বা স্বাভাবিক কোষ গুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকে।


এক পর্যায়ে রোগী শুকাতে থাকে। ক্যান্সার আক্রান্ত স্থানে ঘা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পরবর্তীতে আক্রান্ত স্থানে মাছি, ডিম, এসে বসে ফলে পোকা হয়। মাংস, লিভার, ছড়িয়ে পড়ে  পরবর্তীতে মৃত্যুতে ত্বরান্বিত করে। খাদ্যনালীতে ক্যান্সার হলে মুখে দিয়ে খাদ্য গিলতে পারেনা এক্ষেত্রে অনাহারি থেকে রোগীর মৃত্যু দেখে এগিয়ে যেতে থাকে। যদি কারো পায়ুপথে ক্যান্সার হয়ে থাকে তাহলে পায়খানা বন্ধ হয়ে রোগী মারা যায়। 


প্যাথলজিক্যালি ক্যান্সার মূলত দুই ধরনের নাম্বার ওয়ান কারসিনোমা  ও সারকোমা। সারকোমা ক্যান্সার দেখা দিলে চিকিৎসা না হলে রোগী তাড়াতাড়ি মারা যায়। শরীরের মধ্যে বা বাহিরে ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ গুলো যদি আবরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে তাকে কারসিনোমা ইন সিটো বলা হয়। আর যদি আবারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না করে সীমানা ভেদ করে থাকে তাহলে নিচের স্তরে প্রবেশ করে তখন তাকে ইনভেসিভ কারসিনোমা বলে। 


ক্যান্সার হলে কি করবেন


ক্যান্সার চিকিৎসা রয়েছে তিন প্রকারের এক: সার্জারি, দ্বিতীয়তঃ ক্যামো  থেরাপি তৃতীয়তঃ রেডিওথেরাপি। ক্যান্সার আকার যখন অনেক ছোট থাকে তখন সার্জারি করায় বেশি ফলপ্রসূ। এর জন্য সতর্ক থাকা উচিত প্রথম স্টেজে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার চিকিৎসা শুরু করা ভালো। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ক্যান্সারের জন্য ভালো চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র রয়েছে। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি জন্য অনেক ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।

  

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়


বিশ্বজুড়ে স্তন ক্যান্সার  এর হার দিনের দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষকরা বলেছেন যে জীবন আচরণ পাল্টে এস্টেন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই হ্ৰাস  করা যায়। এর মধ্যে প্রথমত খাদ্যাভাসের বিষয়টি লক্ষণীয়। স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তাদের জন্যই বেশি যাদের ওজন বেশি, স্থূলতায় ভুগছেন।এজন্য অতিরিক্ত ওজন ভালো নয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।


খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আশ যুক্ত খাবার খেতে হবে। এতে করে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। আশ জাতীয় খাবার খেলে পরিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। বর্জ্য নিঃসরণ ও কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখে। সতেজ ফলমূল খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্লাক রাসবেরি,  ডালিম এগুলোতে রয়েছে এলিডিক  এসিড যা উচ্চ মানের এন্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও হলুদ সবুজ ও কমলা রঙের শাকসবজিতে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url