গ্যাস্ট্রোলিভার রোগের লক্ষণ

প্রিয় পাঠক আজকের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো গ্যাস্ট্রোলিভারের  লক্ষণ, লিভার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার,  লিভার সিরোসিসের লক্ষন , লিভার সমস্যার লক্ষণ, লিভার রোগের কারণ সম্পর্কে।

 

লিভার রোগ একটি মারাত্মক রোগ।  সাধারণত যে সময় লিভার সিরোসিস রোগ সনাক্ত হয় থাকে তখন রোগীর কাছে সময় থাকে না অর্থাৎ চিকিৎসা সময় খুবই কম থাকে।

 

এটি মারাত্মক ও অনিরাময়ের যোগ্য রোগ।  লিভার সিরোসিস হল লিভারের যতগুলো রোগ রয়েছে তার মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি রোগ। লিভার সিরোসিসের হলে যকৃতের ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপন ছাড়া পুরোপুরি আরোগ্য হয় না।


 

গ্যাস্ট্রোলিভার রোগের লক্ষণ


গ্যাস্ট্রোলিভার বলতে মূলত বুঝায় পাক তন্ত্র বিদ্যা বা গ্যাস্ট্রো এন্ট্রোলজি চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি বিশেষজ্ঞ শাখা। এর মূল বিষয়বস্তু হলো পরিপাকতন্ত্রের অর্থাৎ মানুষের মুখ জিব্বা থেকে শুরু করে মলদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত নালীর রোগ সমস্যা ও অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।  এর জন্য যে চিকিৎসা সেবা প্রদান বা সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করে থাকে তাকে গ্যাস্ট্রোলিভার বলে।

 

গ্যাস্ট্রোলিভার রোগের মধ্যে লিভার সিরোসিস একটি বিপদজনক ও অনিরাময়যোগ্য রোগ।এ রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। যতটুকু ক্ষতি হয়েছে এর চেয়ে সামনে যেন আর ক্ষতি না হয় সেরকম পরামর্শ দিয়ে থাকে চিকিৎসকরা।

 


বর্তমানে বাংলাদেশে লিভার সিরোসিস এর আক্রমণ সংখ্যা কতটা এখন পর্যন্ত তা সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে হেপাটাইটিস বি ও সি রোগের আক্রান্ত রোগের সংখ্যা প্রায় এক কোটির ও  বেশি মানুষ। লিভার সিরোসিসে আক্রান্তএর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ রোগী। সেই হিসাবে প্রতি এক কোটি মানুষের মাঝে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ লিভারে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়।


চিকিৎসক গবেষকরা বলে থাকেন, এমন একটি রোগ শুরুর দিকে তেমন কোন উপসর্গ থাকে না। লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে পেটের অস্ত্র-পচার  বা আল্ট্রা সাউন্ড করতে গেলে। এই রোগের লক্ষণটি হল জন্ডিস ও যকৃতের রোগের। প্রকৃত শনাক্তকরণিত হয় বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা, সিটিস্ক্যান, বায়োপসি, এমআরআই ইত্যাদি।

  

ডাক্তার মোহাম্মদ আলী সাধারণ মানুষকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই বলে, যদি কিছু লক্ষণ দেখা দেয় যকৃত রোগ বা জন্ডিসের।  তখন অবহেলা করবেন না বিষয় সতর্কিত হবেন।


লক্ষণ গুলো হলো এমন শারীরিক দুর্বলতা, খাবার প্রতি অনিচ্ছা বা খাবারের প্রতি অরুচি, পেটের ভিতর অস্বস্তিকর ভাব, দিন দিন ওজন কমে যাওয়া, মনের ভিতর অবসাদ  কাজ করা, এসব ধরনের লক্ষ্য দেখা দিলে ভালো চিকিৎসকের নিকটস্থ হতে হবে। 


এছাড়াও লিভার সিরোসিস  হয়ে থাকলে পেটের ভিতর পানি আসতে পারে, চোখ ও প্রসাব হলুদ হয়ে যেতে পারে। অনেকে অনেক সময় চেতনা শক্তি হারিয়ে ফেলে কোমায় চলে  যেতে পারে।


 

লিভার রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার


লক্ষণ:

*ডাক্তার কেভি নারায়ানান বলেন  চোখ হলুদ হয়ে থাকলে এটি একটি লিভার রোগের উপসর্গ। এর থেকে বুঝতে হবে যে আপনার লিভার ভালোমতো আর কাজ করতে পারছে না। এটিকে ধরা হয় লিভার ডিজিজ বা যকৃত রোগের সবচেয়ে নির্দিষ্ট উপসর্গ।


সাধারণত লিভার বিকল হয়ে থাকে বিলিরুবিন নামক হলুদ রঙের একটি পদার্থ দ্বারা। যা শরীর থেকে অপসারিত হয়ে যায়। লিভারে সমস্যা দেখা দিলে শরীরে বিলিরুবিন আস্তে আস্তেবেড়ে  যেতে থাকে যা চোখের সাদা অংশকে হলুদে পরিণত করে তোলে।


*পেট ফুলে যাওয়া লিভার রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ। আপনার পেট যদি হঠাৎ করে ফুলে যায় এবং তা যদি না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন কারণ গ্যাসের কারণে বা ভাঁজাপোড়া খাওয়ার কারণে এরকম হতে পারে।

 

*আপনার হেপাটাইটিস এ, বি  অথবা সি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিবেন। 


*অতিরিক্ত চুলকানি হয়ে থাকলে এটি একটি লিভারের উপসর্গ। এছাড়া প্রতিনিয়ত ক্লান্ত ভাব। অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান করে থাকলে। অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী। পারিবারিকভাবে যকৃত  রোগের ইতিহাস আছে কিনা?


উপরিউক্ত এসব উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা দিলে আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার লিভার ঠিকমতো কাজ করছে না। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 


প্রতিকার:

প্রতিদিন লেবুর জল পান করার অভ্যাস করুন। লেবুতে  রয়েছে ভিটামিন সি যা লিভার কে দূষণমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।


গ্রিন টি প্রতিদিন সকালে বিকালে গ্রিন টি পান করুন। এতে লিভারের কার্যকরিতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।


অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করুন। এটি খাওয়ার নিয়ম হলো এক কাপ উষ্ণ পানিতে কয়েক ফোঁটা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন খাবার খাওয়ার পূর্বে পান করবেন। এটি কয়েক মাস যাবত পান করে থাকলে লিভারের উপর জমে যাওয়া চর্বি থেকে মুক্তি পাবেন। 


আদা পানি খেলে লিভার ফাংশন ভালো থাকে। গরম পানির সাথে এক চা চামচ আদার গুড়া মিশিয়ে প্রতিদিন দুবার পান করবেন। এভাবে প্রায় ১৫ দিন পান করলে দেখবেন আপনি অনেকটাই সুস্থতা বোধ করছেন।


আদার পানি পান করলে লিভার উপর যে চর্বি জমতে থাকে।  তা আদার পানি প্ৰক্রিয়াটি বন্ধ করে দেয়।ফলে লিভার আস্তে আস্তে ভালো হতে শুরু করে। 


লিভার সিরোসিসের লক্ষণ


জন্ডিস হল লিভার সিরোসিসের অন্যতম লক্ষণ। চোখ হলুদ হয়ে যায় লিভার সিরোসিসির কারণে। চোখের সাদা অংশ হলুদ রঙে পরিণত হয়ে ওঠে। শরীরে রক্তের বিলুরুবিনের মাত্রা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে জন্ডিস  দেখা দেয়।


শরীরে বিলিরুবিন সৃষ্টি হয় রক্তের লোহিত কণিকা গুলো স্বাভাবিক নিয়ম থেকে ভেঙ্গে গিয়ে।পরবর্তীতে লিভারে প্রক্রিয়াজাত   হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্ত নালীর ভিতরে পরিপাকতন্ত্রে ঢুকে যায়।এভাবে লিভার সিরোসিসের লক্ষণ গুলো অসুখ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করে। 



লিভারের সমস্যার লক্ষণ


প্রুরিটাস  নামক একটি সমস্যার কারণে আপনার আত ও পায়ের তলায় চুলকানি হয়ে থাকে। এরপর আপনার ত্বকের প্রচুর পরিমাণে চুলকানি শুরু হয়। প্রুরিটাস  সমস্যা ছাড়াও লিভারের সমস্যা জনিত কারণে আপনার হাত পায়ের ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে যায়। এরপর চুলকানির শুরু হয়।


এমন অবস্থায় আপনাকে হাতেও পায়ে ময়েশ্চারাইজার  ব্যবহার করতে হবে।লিভারের সমস্যার কারণে পায়ের তলায় প্রচন্ড ব্যথা হয়। লিভার যখন  তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে তখন তরল জমা শুরু করে। 


লিভার রোগের কারণ


অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ সেবন করলে লিভারের রোগের কারণ হতে পারে। যেসব ওষুধ সেবন করলে ইভারের বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে যেমন: কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের স্টাটিনস , এন্টিবায়োটিক বা ব্যথা নাশক ওষুধ, প্যারাসিটামল, হাইড্রোকডোন (ওপিওয়েডস) .


এছাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যালকোহল গ্রহণ করলে, বিভিন্ন ধরনের নেশা করলে লিভার রোগের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

 শেষ কথা

লিভার রোগ একটি মারাত্মক অনিরাময় যোগ্য রোগ। এটি সাধারণত জন্ডিস রোগের বা যকৃত রোগের উপসর্গের থেকে সৃষ্টি। এটি এমন একটি স্টেজে গিয়ে রোগটি হয় সনাক্ত কৃত হয়। তখন রোগীর চিকিৎসা করাতে হাতে বেশি একটা সময় পাওয়া যায় না। তাই আপনারা এ ধরনের রোগ থেকে দূরে থাকতে বা  সুস্থ রাখতে প্রতি তিন মাস পর পর বা ছয় মাস পর পর নিজের শরীরকে চেকআপ করুন। এছাড়াও হেপাটাইটিস এ,বি ও সি এর জন্য ভ্যাকসিন রয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করুন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url