লিভারে চর্বি কমানোর উপায়

বর্তমানে বাংলাদেশের দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে লিভারে চর্বি বা ফ্যাটি লিভারের রোগীর সংখ্যা। সংখ্যাটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে বলা যায় ফ্যাটি লিভার রোগী এখন ঘরে ঘরে। এমন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে রোগীর আলট্রাসনোগ্রাম করলেই লিভারে চর্বি সন্ধান পাওয়া যায়। যুবক ,বৃদ্ধ ,তরুণ- তরুণী, এর কবল  থেকে রেহাই পাচ্ছে না। অনেক সময় তেমন কোন উপসর্গ না থাকলেও লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মত মারাত্মক কারণ কিন্তু এই ফ্যাটি লিভার। 

লিভারে চর্বি কমানোর উপায়

ফ্যাটি লিভারের চর্বি নিয়ে এক এক জনের চিন্তা চেতনা একেক রকমের। অনেকে ভেবে থাকেন যে, লিভারে চর্বি  জমছে মানেই লিভার শেষ। আবার অনেকে ভাবে লিভার শেষ মানে জীবনটাও শেষ।আবার কেউ কেউ রয়েছে তারা তেমন কোনো গুরুত্বই দেয় না। এ কারণে এই দুই ধরনের রোগী ডাক্তারের কাছে শরণাপন্ন হয়। হেপাটাইটিস বিয়ের পর ফ্যাটি লিভারের রোগের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। 


এখন আলোচনা করব আপনাদের সাথে মূলত ফ্যাটি লিভার টা কি? এটি কেন? হয়!


ফ্যাটি লিভার বলতে বুঝায় লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে থাকলে বা চর্বির  উপস্থিতি। আমরা প্রতিদিন অনেক খাবার খেয়ে থাকি তার কিছু অংশ চর্বি হিসাবে লিভারে গিয়ে জমে থাকে ।



অসুখ-বিসুখের সময় বা অতিরিক্ত যখন পরিশ্রম করে থাকি তখন লিভারে জমতে থাকা চর্বি থেকে দেহের প্রয়োজনের শক্তির যোগান দেয়। এখানে সঞ্চিত চর্বি যতটা সাহায্য করে থাকে ঠিক ততটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

কেননা চর্বি থাকা মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। সবকিছুর একটি সীমাবদ্ধ রয়েছে ঠিক তেমনি লিভারের ৫ শতাংশের বেশি চর্বি জমে থাকলে তাহলে তাকে লিভারের রোগ বা ফ্যাটি লিভার হিসাবে গণ্য করা হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এই চর্বির পরিমাণ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে।


নিচে ফ্যাটি লিভারের উপসর্গ নিয়ে আলোচনা করা হলো:

প্রাথমিকভাবে ফ্যাটি লিভারের উপসর্গ কারো কারো ক্ষেত্রে নাও দেখা দিতে পারে। এটি একটি লিভার সিরোসিসের মতো একটি ক্রনিক লক্ষণ। কারো দেখা দিতেও পারে আবার নাও দিতে পারে। ক্রনিক  লিভারের রোগীর মত ফ্যাটি লিভারের রোগীর ও লক্ষণ নাও থাকতে পারে।


কিছু উপসর্গ:

পেটের ডান পাশের উপরের দিকে ব্যথা।

অস্বস্তি ও ভার ভার ভাব। 

শারীরিক দুর্বলতা ও খুব অল্পপরিশ্রমে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া ইত্যাদি। 


লিভারের চর্বি কমাতে যে সমস্ত খাবার খাবেন।প্রচুর পরিমাণে তাজা ফলমূল ও সবু জ শাক-সবজি। এছাড়া ফাইবার ও আশ যুক্ত খাবার খাবেন যেমন: সবজি ও খোসা সহ ফল। 


বাদাম, কাজুবাদাম, কুমড়োর বীজ,চিয়া বীজ , আখরোট এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পলি ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। বীজও বাদামে  রয়েছে ওমেগা ফ্যাটি এসিড( ৩ ) , যা লিভারের চর্বি কমাতে বেশ কার্যকর। এছাড়া চর্বি ছাড়া আমিষ  যুক্ত খাবার খাবেন যেমন: চর্বি ছাড়া মাংস মাছ, টোফুর মত খাবার। 

লিভারে চর্বি জমার কারণ ও প্রতিকার

কারণ :

লিভারে চর্বি জমার অনেক কারণ রয়েছে যেমন: অতিরিক্ত মোটা বা মেদবহুল শরীর, ডায়াবেটিস, বিজলিপিডিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হেপাটাইটিস সি,হাইপোথাইরয়েডিজম, ডিজলিপিডেমিয়া, অ্যালকোহল গ্রহণ, মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ইত্যাদি। জমতে থাকার চর্বির নব্বই শতাংশ কারণগুলো হলো এগুলো।


প্রতিরোধ:

আপনাকে সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই লিভার ভালো রাখতে হবে তার কোন বিকল্প নেই। ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া বা প্রতিরোধের বিশেষ কিছু উপায় রয়েছে। আপনার অবশ্যই জীবন -যাপন ও খাদ্যাভ্যাসের  ধরন পরিবর্তন  করতে হবে। এছাড়াও কারো যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তা কন্টোলের রাখতে হবে, কারো যদি অতিরিক্ত ওজন থাকলে তার ও কন্ট্রোল রাখতে হবে। এর জন্য কিছু করণীয় রয়েছে সেগুলো নিচে জানিয়ে দিচ্ছি। 


* আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের ধরন মেনে চলতে হবে। সুস্থ থাকতে হলে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের কোন বিকল্প নেই। 


* শারীরিক ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম বৃদ্ধি করতে হবে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যায়াম বা পরিশ্রম কোনটি ভাল নয়। 


* খাবার খেতে হবে নিয়মমাফিক।   তার সাথে সাথে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে কারো যদি মেটাবলিক সিনড্রোম, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, হেপাটাইটিস ভাইরাসজনিত কোনো সমস্যা থাকে।


লিভারের সমস্যা দূর করার উপায়


এখন কথা হল কারো লিভারে চর্বি জমে আছে কিনা, আবার লিভার কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা আদৌ কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কিনা, সে বিষয়ে কিভাবে জানব। এজন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যম রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে এসব বিষয় সম্পর্কে সবকিছুই জানা যায়। এসব পরীক্ষার ভিতর সর্বশেষ পরীক্ষাটি হল ফাইব্রোস্ক্যান। এটির মাধ্যমে খুব সহজে জানা যায়। লিভারের চর্বির পরিমাণ কত শতাংশ ও লিভার এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে।



লিভারের চর্বি কমানোর ওষুধ


অনেকের ভিতর একটি প্রশ্ন ঘুরতে থাকে যে লিভারের চর্বি কমানোর জন্য আদৌ কোন ওষুধ আছে কিনা? তাই আজকে বেসিক ভাইয়ের পক্ষ থেকে এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দেবো।হ্যাঁ! প্রিয় ভিউয়ার্স  প্রাইমারি বিলিয়ারি সিরোসিসের এফডিএ অনুমোদিত "অবিটাকলিক এসিড" নাম নতুন একটি ওষুধ রয়েছে। একটি বিশেষ গবেষণায় এই ওষুধ টু শুধুমাত্র লিভারের চর্বি কমায় না সাথে লিভারের ফাইব্রোসিস বা ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে থাকে। এখন আরো বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বের করার গবেষণা চলছে। 


 

লিভারের চর্বি দূর করার উপায়


*নিয়মিত পুষ্টিকর ও সুষম জাতীয় খাবার রাখতে হবে খাদ্যাভাসে। সারাদিন ভাজা পোড়া খেয়ে পেট ভেসে ভরে  রাখবেন না। ওজন,, কাজের ধরন, উচ্চতা, শারীরিক অবস্থান বিবেচনা করে পুষ্টি ও সুষম জাতীয় খাবার খাবেন। 


* যত সম্ভব আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। তাজা ফলমূল ,সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি। 


*সিজোনাল  ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।  কারণ সিজনাল ফলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদান।


* নিয়মিত লাল চালের ভাত ও লাল আটার রুটি বানিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। 


* প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায়সঠিক পরিমাণে প্রোটিন জাতীয়  খাবার রাখুন।


* কম পরিমাণ ফ্যাট ও কম ক্যালরি ডায়েট  গ্রহণ করুন। 


* সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন, যেমন সারাদিন, টুনা, কম ফ্যাট যুক্ত দুধ বা তৈরি খাবার। এছাড়াও খেতে পারেন অ্যাভোক্যাডো, ওটস,রসুন, গ্রিন টি , ইত্যাদি।


লিভার সুস্থ রাখার উপায় কি

চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে, অ্যালকোহল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, আইসক্রিম ও কোকাকোলা এতে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাট থাকে এটিও পরিবার করতে হবে।স্বল্প পরিমাণে চিনি ,লবণ রিফাইনড,  কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, খাবার গ্রহণ করুন।


অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার, অতিরিক্ত লবণ, লাল মাংস, এ খাবারগুলো পরিহার করতে হবে।


 

ইতি  কথা 

লিভারের যতগুলো রোগ রয়েছে তার মধ্যে ফ্যাটি লিভার একটি বিশেষ রোগ।  মূলত ফ্যাটি লিভার থেকেই অন্যান্য রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। তাই ফ্যাটি লিভারকে তাচ্ছিল ভাবে দেখা যাবে না। দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসা করাতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার কমিয়ে আনা যায়।   


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url