কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ ||কিডনি রোগের ১০ লক্ষণ জানেন কি?
প্রিয় ভিউয়ার্স আশা করি সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজকে আপনাদের সামনে এমন একটি আর্টিকেল নিয়ে আসলাম যেটি আমাদের সকল মানুষের ক্ষেত্রে জানার প্রয়োজন। আর্টিকেলটি হল কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ, কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা, ভালো রাখার উপায় ও আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ুন । আজকের আর্টিকেলটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমানে প্রতিবছর ৪০ হাজারেরও বেশি কিডনি অকেজো হচ্ছে।
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ
মানুষের দুটি কিডনি থাকে। অনেক সময় কিডনি আক্রান্তে দুটি কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়। ফলে শরীরে বর্জ্য ফিল্টার করতে ব্যর্থ হয়। ডাক্তারি ভাষায় এটিকে বলা হয় দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের শেষ পর্যায়। কিডনি ড্যামেজের আরেকটি নাম(ESRD) অর্থাৎ এন্ড-স্টেজ রেনাল ডিজিজ।
কিডনিতে আক্রান্ত রোগীদের কিডনি ড্যামেজ হওয়ায় ডায়ালাইসিস ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট আবশ্যক। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ এ সম্পর্কে মানুষজন সচেতন নয়। এমন একটি রোগ এটি আপনি সহজে বুঝতে পারবেন না আপনার কি কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এজন্য আমাদের এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। ১০ পার্সেন্ট এর মত লোক জানেন যে তারা কিডনি রোগে আক্রান্ত।আমাদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের শরীরের অবস্থা জানা ও কিভাবে আমরা আমাদের কিডনিকে আরো বেশিদিন সুস্থ সবল ধরে রাখা যায় সে বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা।
যখন কিডনি পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যায় তখন নিশ্চিত ভাবে জানার একমাত্র উপায় হল আপনার শরীরের ভিতরে কোন অস্বাভাবিক শারীরিক লক্ষণ দেখা দিলে। অতি দ্রুত চিকিৎসকের নিকট নিকটস্থ হওয়া।
আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন কিডনিতে সমস্যা সৃষ্টির প্রধান একটি লক্ষণ প্রসাবের পরিবর্তন। কিডনি সমস্যা জনিত কারণে প্রসাবের পরিবর্তন হয়ে থাকে। আমাদের শরীরের প্রসাব তৈরি করে থাকে কিডনি। শরীর এর রক্ত ফিল্টার করে এবং আমাদের শরীরের ভিতরের বর্জ্য বের করে দেয়। বর্জগুলো কিডনি দ্বারা মূত্রাশয় চলে যায় এবং পরবর্তীতে তা আমাদের শরীর থেকে মূত্র হিসেবে বর্জ্য বের হয়ে যায়।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
আপনার যদি কোন রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকে তাহলে আপনার জন্য অনেক সুফল বয়ে আনবে। আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে যে কোন রোগের চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি লক্ষণগুলো সনাক্ত করা।
কিডনি ড্যামেজ হওয়ায় আপনি বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ বিভিন্ন সময়ে অনুভব করতে পারবেন। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো
প্রসাবের পরিমাণ কম
কিডনি প্রসাব উৎপাদন করে থাকে এক্ষেত্রে যদি আপনার প্রসাব ধীরগতিতে উৎপাদন হয় আর সম্পূর্ণরূপে উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে তা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ হতে পারে। প্রসাব উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলো জমতে থাকে। প্রসব উৎপাদনের বাধা বাহ্যিক বাধার ফলেও হতে পারে। যেমন: বিবর্ধিত প্রোস্টেট,মূত্রাশয় টিউমার,কিডনিতে পাথর।
কতক্ষণ পর পর প্রসব হওয়া/ঘন ঘন প্রসব হওয়া
রক্ত প্রসাব
কিডনি আক্রান্ত হয়ে থাকলে ফিল্টারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তখন প্রসাবের মধ্যে রক্তের কোষগুলি লিক হয়ে যায়। প্রসাবের রক্ত টিউমার কিডনিতে পাথর বা বিভিন্ন সংক্রমনদেখা যায়।
চোখের চারপাশ খুলে যাবে ফিল্টার গুলি ক্ষতির কারণে এর সাথে প্রসাবে প্রচুর পরিমাণে প্রতিদিন বের হয়ে যাবে। এটি হলো চোখ ফোলার অন্যতম কারণ।
প্রসাবে অতিরিক্ত ফেনা
প্রসাবে যখনই অতিরিক্ত প্রোটিনের উপস্থিতি দেখা দেয় তখনই প্রসাবে অতিরিক্ত ফেনারসৃষ্টি হয়। ডিম স্ক্র্যাম্বল করার সময় দেখা যায় এমন ফেনা।
প্রসাবের পরিবর্তন দেখা দেয়
কিডনি ড্যামেজ হওয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রসাবের নানান ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন প্রসাবের রং, গন্ধ ,ব্যথার কিছু পরিবর্তন এসব উপসর্গের মাধ্যমে বোঝা যায় যে কিডনিতে কিছু সমস্যা রয়েছে।
এছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির ড্যামেজের পারিবারিক ইতিহাস বা ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষদের সকল ধরনের সমস্যার প্রবণতা বেশি থাকে।
শ্বাসকষ্টে সমস্যা দেখা দেয়
কিডনি ড্যামেজ হলে বা কোনভাবে কিডনি প্রভাবিত হয়ে থাকলে কোন কারনে তখনই আপনি আপনার শ্বাস নিতে সমস্যা অনুভব করতে থাকবেন। এ সমস্যাটি দেখা যায় রক্তস্বল্পতা বা আপনার ফুসফুসের তরল জমতে থাকে সে কারণে।
হালকা ঠান্ডা লাগলেও মনে হবে যেন আপনার অস্বাভাবিক ঠান্ডা লেগেছে সেরকম কিছু অনুভব করা। কিডনি ব্যর্থতার বা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণগুলোর সাথে স্পষ্টভাবে সম্পর্কিত।
ক্লান্তি ভাব
শরীরে ক্লান্তি ভাব অনুভব করা। কাজ করতে গেলে হাপিয়ে যাওয়া। এটি মূলত হয়ে থাকে শরীরে অক্সিজেন বহণকারী লোহিত রক্তকণিকার কারণে। যখন এরিথ্রোপয়েটিন কম উৎপাদন হয়।
বিভ্রান্তি বোধ সৃষ্টি
কিডনি ড্যামেজ হওয়ার যতগুলো লক্ষণ রয়েছে তার মধ্যে একটি তাৎক্ষণিক লক্ষণ। এটি সাধারণত হয়ে থাকে ডিভাইডারেশনের কারণে বা ইলেক্ট্রোলাইট স্তরের পরিবর্তন হওয়ার কারণে আপনি আপনার মেজাজ হারিয়ে ফেলবেন ও জ্ঞানের পরিবর্তন দেখা দিবে যার ফলে আপনার মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
বমি বমি ভাব হওয়া
কিডনি ড্যামেজ হওয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা বন্ধু আমি ভাব অনুভব করে থাকে। এর প্রধান কারণ হলো শরীরের রক্তে মারাত্মক বর্জ্য জমতে থাকে।
ফলে শরীরে বিষ বা বর্জ্য বের করে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে এবং সে সময় বমি হয়। উপরের যতগুলো উপসর্গ আছে তার মধ্যে এটি একটি সাধারণ উপসর্গ। যা কিডনি স্বাস্থ্য সমস্যা গুলির সাথে থাকে।
শরীর দুর্বল হয়ে যায়
কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে সব ধরনের উপসর্গ অনুভব আপনি নাও করতে পারেন। এর ফলে কিডনি ব্যর্থতার বেশির ভাগ প্রাথমিক লক্ষণ গুলো অন্যান্য অবস্থার সাথে বিভ্রান্ত হতে পারে যা রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে খুবই কঠিন করে তোলে।
কেন তুমি পর্যায়ে সব ধরনের উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে তবে যখন আপনার কিডনির আরো বেশি খারাপ হতে চলবে তখন আপনি অবশ্যই এসব উপসর্গ অনুভব করতে পারবেন। এজন্য অন্ততপক্ষে ছয় মাস পর শরীর চেকআপ করা প্রয়োজন। কারণ এটি এমন একটি রোগ প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ের সর্বদা বিবেচনা করা হয় কারণ চিকিৎসার দেরি হলে ক্ষতি হয়ে থাকে।
কিডনি ভালো রাখার উপায়
মানুষের শরীরে যতগুলো অঙ্গ রয়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। কিডনি মানব শরীরকে সুস্থ রাখতে শরীরের ভেতর যে বর্জ্য থাকে তা রক্ত থেকে বের করে শরীরকে সুস্থ রাখে। কিডনিতে বেশিরভাগ সমস্যা আমাদের নিজেদের ভুলের কারণে হয়ে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের ও জীবন যাপনের জন্য।
কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি বা নিয়ম কানুন রয়েছে তার মাধ্যমে কিডনি ভালো রাখা যায়। এতে করে আপনি সুস্থ থাকতে পারেন এবং খুশি কমবে নানা রোগের। এখন কথা হল আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনার কিডনিতে সমস্যা রয়েছে সেজন্য উপরে আলোচনা করা হলো তারপর আমি সংক্ষেপ আলোচনা করে দিচ্ছি যে প্রাথমিক লক্ষণ গুলো হল যে সব লক্ষণ গুলো নজর আসে তা হল পেট পা ফুলে যাওয়া।
মানব শরীরে যে টিস্যুগুলান থাকে সেগুলো ফুলে যায় অতিরিক্ত পানি ও লবণ জমে যাওয়ার কারণে। অক্সিজেনের মাত্রা ও পুষ্টির মাত্রা যদি বজায় থাকে তাহলে কিডনি ঠিক থাকে। এজন্য আমাদের সবাইকে অবশ্যই তিন্নির প্রতি ভালো খেয়াল রাখতে হবে ওযত্ন করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
কিডনির প্রধান কাজ হল রক্তের মধ্যে যে বর্জ্য থাকে তা শরীর থেকে প্রসাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া।ডাক্তারি ভাষায় এই দূষিত পদার্থ খাবার ও পানীয়র মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে থাকে তাই খাবারের ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
কিডনি সুস্থ রাখতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণঅবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতিরিক্ত মসলা ও তেল যুক্ত খাবার কিডনিকে খুব দ্রুত ক্ষতি করে থাকে। এছাড়াও অতিরিক্ত চিনি লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে চর্বিযুক্ত খাবার কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
অপরপক্ষে হাই পটাসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন কলা, কমলালেবু, পালং শাক, কিডনি ভালো রাখতে বেশ কার্যকর।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
কিডনিকে সুস্থ সবল রাখতে সবচেয়ে একটি সহজ ও ভালো উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে অন্যান্য রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পর্যাপ্ত পানি পান করায় আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত যে টক্সিন সেটাকে বের করে দেয়।
নিয়মিত ব্যায়াম
কিডনিকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন এছাড়াও ব্যায়াম করলে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। রক্তচাপ কমিয়ে থাকে নিয়মিত ব্যায়াম করলে। এ কারণে প্রতিদিন 20 থেকে 30 মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
মদ্যপান ও ধূমপান ত্যাগ করুন
অতিরিক্ত ধূমপান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফুসফুসকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে তেমনি কিডনিতে প্রভাবিত করে তোলে। আমরা ধূমপান থেকে মদ্যপান থেকে বিরত থাকবো এবং নিজেকে সুস্থ রাখবো।
এন্টিবায়োটিক কম খাওয়া
আমরা অনেকেই অল্পসল্প ব্যথা পেলে ব্যথা নাশক ওষুধ সেবন করে থাকি। এ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসপিরিনের এ ধরনের ব্যথা নাশক ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন করলে যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। যতটা সম্ভব এই ওষুধগুলো এড়িয়ে চলুন অথবা ডোজ কমিয়ে খান।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো
কিডনির জন্য মোটেই ভালো না উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ শর্করার পরিমান। সচেতনতার জন্য নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান। এছাড়াও শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করুন।
শেষ কথা
অধিকাংশ লোকই কিডনির কার্যকারিতা শেষ পর্যায়ে গিয়ে খেয়াল করে যে তাদের শরীর খুব দুর্বল বা খাবার ধাতব স্বাদ লক্ষ্য করতে শুরু করে। প্রসাব করার সময় রক্ত ক্ষয় হতে থাকে। এই রক্তের খয়ের সাথে অন্যান্য উপসর্গ গুলো দেখা দেয় যেমন চুলকানি, অস্থির বা পা সিনড্রোম, আঙ্গুলের শিহরণ, পায়ের আঙ্গুলে অসাড়তা।
এছাড়াও রয়েছে অনিমিত হৃদস্পন্দন এটি হল কিডনি ড্যামেজ রোগীদের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি লক্ষ্য। যাকে বলা হয় অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন।