হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয়

প্রিয় পাঠক আজকে আপনাদের সাথে এমন একটি আর্টিকেল নিয়ে আলোচনা করব যা আমাদের সকলের জানা উচিত। আজকের  আর্টিকেলে  হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যবলি তুলে ধরব। বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ুন।চলুন আর দেরি না করে এবার শুরু করা যাক। 



হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে করনীয়

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সাথে আমরা কম বেশি সবই সবাই পরিচিত।  অনেকে এই ভাইরাসকে নীরব ঘাতক বলে আখ্যায়িত করেন।যা মানুষের শরীরে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। এজন্য আমাদের সকলকেই হেপাটাইটিস বি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। কেননা বাংলাদেশে এর প্রাদুর্ভাব  দিনের দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।


এমন একটি ভাইরাস আমরা সাধারনত টের পেয়ে থাকি না যে আমাদের হেপাটাইটিস বি হয়েছে কিনা এজন্য আমরা আলাদাভাবে চিকিৎসা করাতে চাই না। আমরা জানতে পারি বিভিন্ন জায়গায় রক্ত দান করার সময় এবং বিভিন্ন কারণে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে গিয়ে। অনেকের শরীরে ভাইরাসটি ধরা পড়েছে। এর একমাত্র কারণ এই ভাইরাসটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তে সুপ্ত অবস্থায় দীর্ঘকাল থেকে যায়। 



কোন ব্যক্তির শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমনের উপস্থিতি থাকে বা জানতে পারে তাহলে সর্বপ্রথমে যেটি করতে হবে সেটি হল তার পরিবারের সকল সদস্যদের  বিশেষ করে  মা -বাবা, ভাই -বোন, স্বামী- স্ত্রী, সন্তানদের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কিনা সে বিষয়ে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যাদের ভিতর এই ভাইরাসের উপস্থিতি নেই তারা খুব সহজেই একটি টিকা গ্রহণের মাধ্যমে নীরব ঘাতক ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। 


বিশেষ করে কখনো যদি কোন গর্ভবতী নারী হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের উপস্থিতি থেকে থাকে তাহলে তার উচিত হবে গর্ভকালীন সময় গাইনি এবং পরিপাকতন্ত্র লিভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন থাকা। এক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা অবশ্যই হাসপাতালে হতে হবে। মায়ের নিকট থেকে তার গর্ভের সন্তানের শরীরে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। সে কারণে সন্তান জন্মানোর পরপরই সন্তানকে এই ভাইরাস থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে টিকা দিতে হবে। 



সময়মতো যদি সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা না হয়ে থাকে পরবর্তীতে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের কারণে লিভার সিরোসিস হতে পারে। এছাড়াও লিভার ক্যান্সারও  নানারকম রোগের জটিলতা দেখা দেয় দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। 


হেপাটাইটিস বি হলে বুঝবেন কিভাবে


আপনার শরীরে হেপাটাইটিস বি রয়েছে কিনা এটি বুঝতে হলে জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই একজন পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নিকটস্থ হতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নানান ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।


এই রোগ অন্য সব রোগের চেয়ে ব্যতিক্রম। এর চিকিৎসা বা ফলোআপ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। ভাগ্য খারাপ থাকলে অনেকের ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা ও ফলোআপ দীর্ঘমেয়াদীর চেয়েও বেশি কিছু হতে পারে। সারা জীবন চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।



হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে নিরাময় কি সম্ভব


মানুষের মধ্যে একটি কথা শোনা যায় হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কোন চিকিৎসা নেই। না প্রিয় পাঠকগণ এটি আপনাদের বা আমাদের অনেকেরই একটি ভুল ধারণা। আবার কিছু কিছু লোক রয়েছে তারা এমনটি বলে থাকেন যে কোন সমস্যা যদি হয়ে থাকে তাহলে কোন চিকিৎসা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি?


বাস্তব কথা হল হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বিরুদ্ধে বর্তমানে বেশ কার্যকরী কিছু ওষুধ রয়েছে।রোগের প্রথম ধাপে যদি সঠিকটিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক ক্ষেত্রে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।



এছাড়াও সঠিক সময় চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই ভাইরাসজনিত জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় যেমন: লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার। এই ভয়াবহ রোগ হয়ে থাকলে অনেক রোগী মারাও যান বাঁচিয়েতোলা সম্ভব হয় না। 



হেপাটাইটিস বি হলে কি বিয়ে করা যায়


প্রিয় পাঠকগণ হেপাটাইটিস বি হলে বিয়ে করা ঠিক হবে না।  কারণ এটি আপনার কাছ থেকে ছড়িয়ে যেতে পারে। আপনারা স্বামী-স্ত্রীর দুজনেই এক ছাদের তলে বসবাস করবেন এক্ষেত্রে যদি টিকা গ্রহণ করেও থাকেন তা হলো আপনি পারবেন না।


সে ক্ষেত্রে আপনার টিকার বিরুদ্ধে হেপাটাইটিস বি দেশ শক্তিশালী কার্যকর নেওয়ার রূপ ধারণ করবে।একসময় না একসময় এটি কার বিরুদ্ধে গিয়েও ভাইরাসটি স্বামীবা স্ত্রীর শরীরে প্রবেশ করতে পারে।  এজন্য এমতাবস্থায় বিয়ে না করাই ভালো হবে। 



হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ


সর্দি, হাসি ,কাশি ও স্তন্যপানের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায় না।হেপাটাইটিস বি রোগ বা ভাইরাস মুখের লালায় থেকে থাকে।  তবে একই থালা -বাটি ব্যবহার করলে বা চুম্বনের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায় না।

 
তবে আক্রান্তকারী ব্যক্তির রক্ত ও শরীর থেকে বের হওয়া অন্যান্য দেহ রসের থেকে দ্রুতই রোগ ছড়ায়।অনেক সময় ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পরেও তিন মাসের ভিতরে কোন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায় না এবং অনেক সময় শরীরে দুই থেকে বার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।


এ সময়ও রোগীর কাছ থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে এবং শরীরে বাইরে সাতদিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। 




বিশেষ কথা

হেপাটাইটিস বি পজিটিভ (ভাইরাস) এর জন্য বাংলাদেশ সরকার সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির ব্যাবস্থায়  হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর সকলকে এই টিকা গ্রহণের বার্তা দিচ্ছেন। সামনের দিনে এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে সকলেই ধীরে ধীরে মুক্তি পাবো  বলে আশা করা যায়।


যারা এখন পর্যন্ত এই টিকা গ্রহণ করেননি তাদের অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে বিশেষভাবে সেটি হল এই ভাইরাসে আক্রান্তকারী ব্যক্তি  কখনোই কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না।    

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url