হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়
প্রিয় ভিউয়ার্স আশা করি সবাই ভাল আছেন সুস্থ আছেন। আজকে আপনাদের মাঝে বেসিক ভাইয়ের পক্ষ থেকে আবারও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নিয়ে হাজির হলাম। আর্টিকেলটি হল হেপাটাইটিস 'বি, নেগেটিভ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাবলী গুলো তুলে ধরা হবে। যুগান্তর সংবাদপত্রের মাধ্যমে ২০২১ সালে একটি প্রতিবেদনে জানা যায় যে প্রতিবছর দেশে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার প্রায় 20 হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করতেছে। হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসজনিত আক্রান্তর বাইরে ও হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাসেওঅনেকেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায়
হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস একটি নীরব ঘাতক ভাইরাস। জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন গড়ে তুলতে হেপাটাইটিস দিবস ঘোষণা করা হয়। হেপাটাইটিস দিবস পালন করার জন্য। হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করার উপায় সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমে আমাদের রোগ সম্পর্কে জানতে হবে।যদি এই রোগ প্রতিরোধ করতে হয়। তার পরবর্তীতে রোগ প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে শিখতে হবে। আর আমরা যদি জানতে পারি এ রোগ কিভাবে ছড়ায় তাহলে হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করা সম্ভব।
একটি মারাত্মক ভাইরাস হেপাটাইটিস (বি )ভাইরাস। এটি আমাদের লিভারের ভিতরে স্বল্পমেয়াদি প্রদাহ বা অ্যাকিউট হেপাটাইটিস তৈরি করতে পারে। আবার দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন এবং প্রদাহ বা ক্রনিক হেপাটাইটিস তৈরি করতে পারে। এই লিভারের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ (ক্রনিক হেপাটাইটিস) থেকে সৃষ্টি হয় লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিলতম রোগ।
হেপাটাইটিস বি পজিটিভ হলে অনেকের মাঝেই একটি উদ্বিগ্ন কাজ করে এবং তারা জানতে চান যে এটি নির্মূল করার চিকিৎসা আছে কিনা এবং এটি নেগেটিভ হতে পারে কিনা?
জানতে হলে নিম্নিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
লিভারের স্বল্প মেয়াদী প্রদাহের (অ্যাকিউট হেপাটাইটিস) মধ্যে জন্ডিস,, দুর্বলতা খাবারের অরুচি, ইত্যাদি ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্তকারী ব্যক্তি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গিয়ে হয়তো বা জেনে থাকেন যে তার ভিতর এ ধরনের ভাইরাসযুক্ত আছে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ (ক্রনিক হেপাটাইটিস) এর তেমন কোন উপসর্গ বা লক্ষণ নাই বললেই চলে। এর ফলে বেশিরভাগ লোকই জানতে পারেন না যে তার শরীরে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে বাসা বেধেছে এবং নিরবে তার শরীরকে ক্ষতি করে চলতেছে। এজন্য হেপাটাইটিস (বি) ভাইরাসকে বলা হয় এটি একটি নীরব ঘাতক জনিত ভাইরাস।
দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ (ক্রনিক হেপাটাইটিস) বা হেপাটাইটিস বিয়ার চিকিৎসায় বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে বেশ কয়েকটি এন্টিভাইরাস ওষুধ রয়েছে। যার সব কয়টি ওষুধই আমাদের দেশে এখন পাওয়া যায়। এসব ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ কার্যকরী ভাবে ভাইরাল লোড কমিয়ে লিভার প্রদাহ বন্ধ করে দিতে সক্ষম। প্রতিরোধ করতে পারে লিভার সিরোসিস হওয়া থেকে।
তবে, এ ধরনের ওষুধ যে সব সময় কার্যকর হবে বিষয়টিতে এমনও নয়। ওষুধের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কারণ এই চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী এইসব ওষুধ হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ করতে পারে শুধু পাঁচ থেকে দশ পার্সেন্ট এর ক্ষেত্রে। এর পাশাপাশি আরেকটি তথ্য জেনে রাখা ভালো প্রাপ্তবয়স্ক কারো যদি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে ৯৫% ক্ষেত্রেই কোনো অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ছাড়াই HBsAg নেগেটিভ হয়ে যায়। চিকিৎসায় হেপাটাইটিস বি পুরোপুরি নেগেটিভ না হলেও লিভার সোরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের কাছ থেকে সুস্থ রাখা সম্ভব।
আরো বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অধ্যাপক ফারুক আহমেদ টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন।আমরা সকলে যদি জানতে পারি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আসলে কি কারনে ছড়িয়ে থাকে তাহলে রোগ প্রতিরোধ যোগ্য বা নেগেটিভ করা সম্ভব।
তিনি কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য। তিনি জানান যে ব্লেড, সিরিঞ্জ, রেজার,ইনজেকশন , সুচ এগুলোর মাধ্যমে সাধারণত এ ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। এ কারণে এই সকল জিনিসগুলো একবারের বেশি ব্যবহার করতে নিষেধ করে থাকেন।
তিনি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানান সেটি হল
তিনি আরো বলেন,গর্ভবতী নারীর শরীরে যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাস যুক্ত থাকে তাহলে এ ভাইরাস তার বাচ্চার শরীরে ছড়াতে পারে। তাই সকলকে বিশেষভাবে মেয়েদের শরীরের রক্ত চেক করে নিতে হবে ভাইরাসযুক্ত কিনা। যদি ভাইরাস যুক্ত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদেরকে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।
আর যাদের শরীরের ভাইরাস নেই তাদেরকে অবশ্যই টিকা গ্রহণ করতে হবে। কেননা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধ করার অন্যতম প্রধান উপায় টিকা গ্রহণ। পরিবারের সকলকে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করতে হবে যে কোন সদস্যের রক্তের ভিতর এ ধরনের ভাইরাস আছে কিনা। যদি না থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে টিকা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বাচ্চাদের ভেতর ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে থাকে এজন্য সরকারের আইন ও নির্দেশনা অনুযায়ী ৯৮ থেকে ৯৯% বাচ্চা এখন বি ভাইরাসের টিকা পাচ্ছে।
এছাড়াও আমাদের খাদ্য গ্রহণ করার ব্যাপারে অনেক সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ হেপাটাইটিস (এ) এবং (বি) ভাইরাস খাদ্যবাহিত রোগ। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রয়েছে কার্যকরী টিকা।তারপরও আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে। পরিহার করতে হবে স্টিট ফুড, জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড এ জাতীয় খাবার।
খাবার পানির দিকেও অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যখন তখন যে কোন জায়গার পানি পান করবো না পানি পান করার পূর্বে অবশ্যই জেনে নেব এটি বিশুদ্ধকরণ পানি কি না।
কারো শরীরে যদি হেপাটাইটিস ভাইরাস পাওয়া যায় তাহলে তাকে অবশ্যই ডাক্তারের আওতায় এসে চিকিৎসা করাতে হবে। এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এ ভাইরাস দূর করতে হবে। পাশাপাশি আক্রান্তকারীর ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে এ ভাইরাস ছড়াতে পারবে না।
হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ সমূহ
হেপাটাইটিস বি পজেটিভ হলে সাধারণত আক্রান্ত হওয়ার প্রায় এক থেকে চার মাস পরে লক্ষণগুলো উপলব্ধি করা যায়। যদিও আপনি আক্রান্ত হওয়ার 2 সপ্তাহের ভেতরেই সেগুলো দেখতে পাবেন।অনেক লোকের ক্ষেত্রে সাধারণত ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এ ধরনের কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে।
নিচে হেপাটাইটিস বি এর সাধারণ লক্ষণ বা উপসর্গগুলো তুলে ধরা হলো:
*পেটে ব্যথা
*ঘন প্রসাব বা গাড়ো প্রস্রাব
*জ্বর
*সন্ধিতে যন্ত্রনা
*কম ক্ষুধা লাগা
*বমি বমি ভাব হওয়া এবং বমি
*দুর্বলতা এবং ক্লান্তি