টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায়

টাইফয়েড জ্বর ভালো হয় কিনা এরকম ধরনের প্রশ্ন কম বেশি আমাদের সকলের মাঝে জাগে। তাই আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য। আমাদের বেসিক ভাইয়ের পক্ষ থেকে আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে টাইফয়েড হওয়ার জ্বর ভালো করার উপায় সম্পর্কে জানাবো। ভালো মতো জানতেও বুঝতে হলে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলুন আর দেরি না করে এবার শুরু করা যাক। 


টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায়


টাইফয়েড জ্বর মূলত দূষিত খাবারও পানির মাধ্যমে ছড়ায়।টাইফয়েড জ্বর সংক্রমণ হয়ে থাকে স্যালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা । প্রধানত দূষিত খাবার ওপানির মাধ্যমে দেহে এই ধরনের জীবাণু ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে এবং এর সাথে সাথে জ্বর সহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

 


বর্তমান সময়ে টাইফয়েড জ্বর বাংলাদেশের খুবই চেনা জানা একটি রোগ। টাইফয়েড জ্বর হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার লোকজনের মধ্যে। টাইফয়েড জ্বরের যে ব্যক্তি আক্রান্ত হয় তার শরীরের ভিতরে রক্ত স্রোতে ও অন্ত্রনালীতে এই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে।



এছাড়াও দূষিত খাবারও পানির  মাধ্যমে এই জীবাণু শরীরের ভিতরে ঢুকে যায়। ঢুকে যাওয়া জীবাণুগুলো গণিতক আকারে বৃদ্ধি পেয়ে রক্ত স্রোতে ছড়িয়ে যায়। এর ফলে জ্বর সহ বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়।

 



টাইফয়েড জ্বর ভালো করার উপায় বা টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করার পদ্ধতি  সম্পর্কে বলব। 


এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে প্রধানত টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসা করে থাকেন ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞরা।নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শুরু করার পর থেকে জ্বর কমতে  পাঁচ দিনের মতো সময় লাগে। টাইফয়েড জ্বর সনাক্ত করার পর থেকে দ্রুত চিকিৎসা না করলে জ্বরের সময়সীমা বৃদ্ধি পেতে পারে সপ্তাহ থেকে বা এক মাসের মত স্থায়ী হতে পারে।


এর পাশাপাশি রোগী অন্যান্য রোগেও কষ্ট পেতে পারে। রোগীর পানি শূন্যতা দেখা দেয় বা দিতে পারে।  কারণ দীর্ঘস্থায়ী জ্বর এবং ডায়রিয়ার কারণে তার শরীর থেকে অনেক পানি বের হয় এজন্য পানি সল্পতা দেখা দেয়। এতে করে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। এজন্য রোগীকে চিকিৎসার পাশাপাশি অধিক পরিমাণে তরল খাবার দেওয়া প্রয়োজন।

 


এরপরেও যদি রোগীর বেশি আকারে পানি শূন্যতা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে শিরাপথে ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে তরল জাতীয় খাবার দেওয়া যেতে পারে। আর টাইফয়েড রোগীকে অবশ্যই পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকলে বা জ্বর বেশি থাকলে পুরো শরীর ভেজা গামছা বা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে হবে। টাইফয়েড জ্বর হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি হারিয়ে ফেলে এজন্য পুষ্টি পুনরুদ্ধারের জন্য উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।



দুটি বিষয় আপনাকে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে তা হলো যতবার বাথরুম ব্যবহার করবেন তারপরে হাত পানীয় সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলবেন এবং মুসলমান ধর্মালম্বীরা ওযু করলে সবচেয়ে ভালো হয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো চিকিৎসক যতদিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক কোর্স গ্রহণের পরামর্শ দিবেন ঠিক ততদিন পর্যন্ত তা গ্রহণ করবেন। 



টাইফয়েড জ্বরের কারণ ও জ্বর কতদিন থাকে


টাইফয়েড  জ্বর মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। টাইফয়েড জ্বর দুই ধরনের।  এটি দুই ধরনের জীবাণুর সংক্রমনের মাধ্যমে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমটি হল সালমোনেলা   টাইফি। দ্বিতীয়টি হল সালমোনেলা  প্যারাটাইফি।



সালমোনেলা টাইফির সংক্রমণের মাধ্যমে যে জ্বর হয়ে থাকে তাকে টাইফয়েড জ্বর বা এন্টারিক ফিভার বলা হয়। আর যদি সালমোনেলা  প্যারাটাইফি সংক্রমনের মাধ্যমে জ্বর হয়ে থাকে তখন তাকে বলা হয় প্যারাটাইফয়েড জ্বর। এই জীবাণুর সংক্রমণ হয় মূলত দূষিত পানীয় ও খাবার গ্রহণের মাধ্যমে।টাইফয়েড জ্বর ৫ দিন থেকে এক মাসের মত সময়সীমা ধরে  হতে পারে।

 


এটি বেশিরভাগ হয়ে থাকে অসচেতনতা বা পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীনতার জন্য। এছাড়াও টাইফয়েড জ্বর থেকে সেরে উঠেছে ঠিকই কিন্তু এই ব্যাকটেরিয়া ঠিকই বহন করছেন এমন কিছু সংখ্যক লোক দ্বারা এই রোগের বাহক হতে পারে।



শরীরে ভিতর যেভাবেই এই জীবাণু প্রবেশ করুক না কেন ঠিক তার পর থেকে বৃহদান্ত্রকে থেকে আক্রমণ করে। শরীরের পিত্তথলিতে ও জমা থাকে এই ব্যাকটেরিয়া।  যা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে নিজে নিজে আরও শক্তিশালী হয়ে আক্রমণ করে। 



টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ


কোন ব্যক্তিকে শরীরে জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার পর 10 থেকে 14 দিন পর এ রোগের লক্ষণসমূহ দেখা দেয়। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হল প্রথম চার পাঁচ দিন জ্বর হওয়ার পরে আবার জ্বর বৃদ্ধি পায় জ্বর কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে কখনোই জ্বর সম্পূর্ণ ভাবে ছেড়ে যায় না এর আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে সেগুলো নিচে দেওয়া হল:


*টাইফয়েড জ্বর হতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত।

*জ্বর হওয়ার পাশাপাশি মাথা ব্যাথা ,শরীর ব্যথা হওয়া ও শারীরিক দুর্বলতা এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

*কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং ক্ষুধামান্দা ভাব হওয়া।

*বাচ্চা বা শিশুদের ডায়রিয়া ও বমি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

*রোগীর কাশি হওয়ার পাশাপাশি গা মেজ মেজ করতে পারে। 

*পেটে প্রচন্ড ব্যথার অনুভূতি হতে পারে। 

*অনেকের জ্বরের সাথে কাশি দেখা দেয়। 

*হার্টবিট স্পন্দন কমতে থাকে। 

*ওষুধ চলাকালীন অবস্থায়ও সপ্তাহখানেক জ্বর থাকতে পারে। 




টাইফয়েড জ্বরের  প্রতিকার


প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি। 


টাইফয়েড জ্বরের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণ করার মাধ্যমে এর রোগ থেকে বাঁচার একটি অন্যতম উপায়।


বাজারে দু ধরনের ভ্যাকসিন পাওয়া যায়।  একটি হলো ইঞ্জেকশন অন্যটি হলো মুখে দিয়ে খাওয়ার ভ্যাকসিন। কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ভ্যাকসিন নিবেন না। আবার ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে  সবসময় ১০০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হবে বিষয়টি তেমনও নয় তাই ভ্যাকসিনের পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা প্রয়োজন।


*প্রথমত আমাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি  উদাসীনতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

 

*শাকসবজি, ফলমূল এবং রান্নাবান্না করার জন্য যেসব বাসনপত্র রয়েছে সেগুলোকে সবসময় পরিষ্কার পানি ধারা ধুতে  হবে। ধোয়া থালা বাসনে আবার তেলাপোকা বিচরণ করতে পারে সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া যারা বেসিন ব্যবহার করেন সেখানেও তেলাপোকা বিচরণ করতে পারে।  এটি খেয়াল রাখবেন।

 

*সব সময় খাবার ভালোভাবে রান্না বা সিদ্ধ করে খাবেন।

 

*খাদ্যগ্রহণ বা প্রস্তুতি বা পরিবেশনের পূর্বে হাত দুটি খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।


*বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। এছাড়াও রান্নাবান্নার কাজে যে পানি ব্যবহৃত হয় সে পানি ও বিশুদ্ধ হতে হবে বা পানি ফুটিয়ে নিতে হবে।


*অনেক সময় দূষিত পানি দিয়ে বরফ তৈরি করা হয় সেই বরফ আমরা বিশুদ্ধপানিতে মিশিয়ে পান করি।এ বিষয়ে থেকে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে বিরত থাকতে হবে এবং অন্যজনকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতে হবে।


*রাস্তার পাশের ভীষণ ছোটখাটো দোকান ও বিভিন্ন জায়গার পানি আমরা পান করে থাকি। এরকম অভ্যাস মোটেও উচিত নয়।  এর কারণেই বেশিরভাগ আমাদের টাইফয়েড জ্বর হয়ে থাকে।  তাই আমরা যেখানে সেখানে পানি পান করা থেকে বিরত থাকবো। আর যদি গ্রহণ করি তাহলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবো যে পানি বিশুদ্ধ  কিনা।

 

*টয়লেট সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবো। 


*টয়লেট ব্যবহার করার পর বা শিশুকে পরিষ্কার করার পর অবশ্যই আমরা হাত-পা সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেব।




টাইফয়েড জ্বর কোন টেস্টের মাধ্যমে সনাক্তকরণ করা হয়


আপনার টাইফয়েড জ্বর হয়েছে কিনা এটি সুনিশ্চিত হতে হলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসক সে ক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরেই বলতে পারবেন যে আপনার টাইপের জ্বর হয়েছে কিনা।


চিকিৎসকগণ সাধারণত টাইফয়েড জ্বর সনাক্তকরণের জন্য দ্রুত ভাবে ব্লাড কালচার নামক রক্ত টেস্ট বা পরীক্ষা দিয়ে থাকে।  টেস্ট করার পর যদি নমুনায় দেখা মিলে স্যালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে সেক্ষেত্রে প্রকারভেদে টাইফয়েড ও প্যারা টাইফয়েডের পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। ছাড়াও জ্বর হওয়ার দুই সপ্তাহ পরে উইডাল  টেস্ট নামে আরো একটি ননস্পেসিফিক ব্লাড টেস্ট করতে হয়। এ টেস্টের মাধ্যমে মূলত নির্ধারণ করা হয় টাইফয়েডের কোন পর্যায়ে রয়েছে। 




টাইফয়েড জ্বরে কি কি খাবে


টাইফয়েড জ্বর হলে শরীরে প্রচুর পরিমাণ পানির অভাব দেখা দেয় বা পানি শূন্যতা দেখা দেয়। কারণ এই রোগের কারণে ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা হয়ে থাকে। যার ফলে রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়।এজন্য শরীর প্রচুর পরিমাণ পানি প্রয়োজন হয়।


পানি শূন্যতা পূরণ করার জন্য বেশি বেশি করে নরমাল পানি পান করতে হবে, এছাড়াও ডাবের পানি,  বিভিন্ন ফলের জুস, শরবত, সুপ খেলে পানির  ঘাটতি পূরণ করা যায়।


টাইফয়েড হলে দুগ্ধ জাতীয়খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়ানো উচিত।  কারণ শরীর থেকে অনেক ক্যালরি বের হয়ে যায় শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে।


ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য লবঙ্গ,তুলসী, গোলমরিচ এগুলো খেতে হবে।


এছাড়াও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার মধ্যে রয়েছে আলু সিদ্ধও  ভাত।


রোগীর শরীর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করার জন্য শুকনো আঙ্গুর, ঘি ,মাখন ,পিনাট ,বাটার, মিষ্টি আলু ,দই খেজুর, ইত্যাদিযুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খেতে হবে।     



টাইফয়েড জ্বরে কি কি খাবে না


টাইফয়েড জ্বর হলে হাই ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা কারণ এতে হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সালাত জাতীয় খাবার, কাঁচা পেঁয়াজ, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার,এগুলো পরিহার করতে হবে। এছাড়াও রয়েছে ব্রাউন রাইস, মসুর ডাল, রাজমা, ব্ল্যাক ভিন্স, ঘুগনি, পটেটো রাই ইত্যাদি ধরনের খাবার



শেষ কথা


টাইফয়েড জ্বর থেকে বাঁচার একটি মূল বন্ত্র মন্ত্র সেটি হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তাই মূল। যারা ভ্রমণ্য কাজ করে থাকেন তাদের জন্য একটু বেশি ঝুঁকি হয়ে থাকে। টাইফয়েড হওয়ার কারণ বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সব সময় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়না টাইফয়েড আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এজন্য টাইফয়েড প্রবন এলাকা থেকে যথাযথ সম্ভব ভালো খাদ্য গ্রহণ ও বিশুদ্ধ পানি পানি পান করা। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url