ডেঙ্গু জ্বরে কখন ও কেন প্লাটিলেট প্রয়োজন||ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ
প্রিয় ভিউয়ার্স ডেঙ্গু জ্বরে কখন ও কেন প্লাটিলেট প্রয়োজন ,ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ,এডিস মশা কখন কামড়ায় চিনবেন কীভাবে? এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ুন। সাম্প্রতিক সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য অনেক ক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজন হয়।চলুন আর দেরি না করে এবার শুরু করা যাক।
ডেঙ্গু জ্বরে কখন ও কেন প্লাটিলেট প্রয়োজন
মানব শরীরে রক্তের ভেতরে তিন ধরনের ক্ষুদ্র রক্ত কণিকা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ছোট রক্ত কণিকা হল প্লাটিলেট। বাংলা ভাষায় বলা হয় অনুচক্রিকা। অস্থিমজ্জায় অনুচক্রিকার উৎপাদন হয়। প্লাটিলেটের কাজ হল রক্ত জমাট বাঁধতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করা। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির শরীরেপ্রতি মাইক্রোলিটারের রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা থাকতে হয় দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত।
এই নির্ধারিত পরিমাপের চাইতেও যদি কখনো প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যায় সে ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না ফলে রক্ত ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় বা দেখা দেয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া। এসব কারণেই ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট প্রয়োজন হয়।
এখন আপনাদের মাঝে আরো একটি প্রশ্ন জাগতেপারে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়া কি বিপদজনক ? সেক্ষেত্রে রোগীর কোন সমস্যার সম্মুখীন হবে?
উত্তর: আমরা সাধারণত জানি ডেঙ্গু হলেই প্লাটিলেটের সংখ্যা কমতে পারে। শুধু ডেঙ্গুর কারণেই প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে না আরো নানান রোগেও সংক্রমণ হলে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমতে পারে। সব সময় যে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলে জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয় বিষয়টি তেমন নয়। তবে প্লাটিলেটের সংখ্যাএক লাখের নিচে নেমে গেলে তখন জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় এবং প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এজন্য প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়া অবশ্যই বিপদজনক। প্লাটিলেটেরসংখ্যা বিশ হাজার নিচে নেমে গেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে কোন ধরনের আঘাত ছাড়াই। লাটিলেটের সংখ্যা দশ হাজারের নিচে নেমে গেলে রোগী আরো মারাত্মক পর্যায়ে থাকে। এমতঅবস্থায় দেহের যে কোন জায়গা থেকে অনবরত রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আপনাদের মাঝে আরো একটি প্রশ্ন জাগতে পারে সেটি হল প্লাটিলেট কমে গেলে কি রক্ত নিতে হয়?
উত্তর:না প্রিয় ভিউয়ার্স প্লাটিলেট কমে গেলেই রক্ত নিতে হবে বিষয়টি এমন নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পেলা-টিলেটের মাত্রা বা সংখ্যা কমে যাওয়ায় একমাত্র সমস্যা নয় এ রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে রক্ত রস কমে যাওয়া রক্তচাপ কমে যাওয়া বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতির শিকার হতে পারে। এ সময় চিকিৎসকগণ লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। এতে করে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে সেক্ষেত্রে রক্ত দেওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন যে অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায় ঠিকই কিন্তু তা আবার কম সময়ের জন্য দুই থেকে তিন দিন পরে নিজে থেকেই প্লাটিলেট বাড়তে থাকে।
তাই আমরা সবাইকে রক্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি না। ১০ হাজারের নিচে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে গেলেও রক্তের প্রয়োজন হয় না যদি না রোগীর রক্ত ক্ষরণ বেশি হয়, রক্তরস কমে যায়,হিমোগ্লোবিন মাত্রা কমে যায়, প্রেশার কমে যায়।
ডেঙ্গু হলে কখন রক্ত নিতে হয়
ডেঙ্গু হলেই যে রক্ত নিতে হবে বিষয়টি তেমন নয় তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হয় তখন রক্ত নিতে হয়। কারণ রক্তনালীর দেয়ালের যে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে সেগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়ে যায় এবং এতে করে রক্তনালীর দেয়াল ভেদ করে রক্তের পানীয় উপাদান বা রক্তনালির বাইরে বের হয়ে চলে আসে। একে এক কথায় বলা হয় প্লাজমা লিকিং। ফলে রোগীর পেটে বা বুকে পানি জমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নাও জানতে পারে।
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ার চাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হল রক্তচাপ কমে যাওয়া।এছাড়াও বিভিন্ন কারণে রোগীর মস্তিষ্ক, কিডনি ,হৃৎপিণ্ডে,রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে।হেমারেজিক শকের কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
যখন রোগীর একটিভ ব্লাডিং হচ্ছে এবং প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজার নিচে নেমে এসেছে সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতিঅনুযায়ী চিকিৎসকগণ রক্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। শুধুমাত্র ডেঙ্গুর কারণে পিলা-টিলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ায় যে রক্তের প্রয়োজন দেখা যায় তা নয়। এখানে আরো আশঙ্কার জায়গা রয়েছে রক্তচাপ কমে যাওয়া, প্রেসার কমে যাওয়া, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম, অক্সিজেনের অভাব হৃৎস্পন্দন বাড়লে। রক্তের প্রয়োজন হয়।
যেসব লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকরা রক্ত নিতে বলেন সেগুলো স্বল্প আকারে আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হলো:
১.প্রথমত পেলাটিনের মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ।
২. শরীরে বেগুনি রংয়ের রক্ত দেখা দিবে ও ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হবে।
৩. র্যাশ দেখা দিবে শরীরে কালো বা লাল রঙের।
৪. নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
৫. এছাড়াও নাক, মুখ ,দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে।
৬. প্রসাব ও পায়খানার সাথে রক্তপাত।
৭. ক্ষতস্থান বা আঘাত জনিত স্থান থেকে বা কোথাও কোনোভাবে কেটে থাকলে তা অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত হওয়া।
৮. শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি করে এবং অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ সৃষ্টি হয়।
ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ
আমরা অনেকেই ভয় থাকি যে ডেঙ্গু জ্বর কি আসলেই ছোঁয়াচে রোগ। না প্রিয় ভিউয়ার্স ডেঙ্গুযোগ কখনোই ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবে পরিবারের কারো যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মূলকারণ হলো অসুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ানো মশাটি যদি অন্য একজন ব্যক্তিকে কামড়াতে পারে তাহলে উভয়জনেরই ডেঙ্গু হতে পারে।আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য মশারি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। যেন অন্যকে না কামড়াতে পারে।
এডিস মশা কখন কামড়ায় চিনবেন কীভাবে
সাধারণত সবাই বিগত কয়েক বছর ধরে জেনে আসতেছি যে এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় এর বিশেষ গবেষণার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ ও পরিলক্ষিত হল যে এই এডিস মশা শুধু দিন নয় এবং রাতেও কামড়ায়। আচরণগত পরিবর্তন ঘটেছে এডিস মশার।