ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর কত সময় পর জ্বর হয়||ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সর্বত্র অঞ্চলে মশা বাহিত ভাইরাসজনিত ডেঙ্গু রোগ সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।এর সাথে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। তাই আমাদের সকলকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্টিকেল। তাই মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন এবং শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন এবং আমরা সকলকে সচেতনতা হওয়ায় সহায়তা করি।
ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর কত সময় পর জ্বর হয়
মশা বাহিত ভাইরাজনিত একটি রোগ হল ডেঙ্গু। প্রত্যেক বছর সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ রুগীর ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে।ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় । এছাড়াও ডেঙ্গু রোগটি ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশসহ অনেক নতুন নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে জানা যায়।
বাংলাদেশে এ বছর সহ বিগত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি খুবই ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। আগে সাধারণত স্বর অঞ্চলে ও পাহাড়ি অঞ্চলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি ছিল। তবে বর্তমান সময়ে গ্রামগঞ্জে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনেকে আমরা ধারণা করে থাকে যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিবে।তবে ডাক্তারের ভাষ্যমতে অনেকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তার ভিতর কোন ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় না। সাধারণত ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর পর ৪ থেকে ১০ দিন পরে লক্ষণ দেখা দেয়।
একটি জরিপের মাধ্যমে জানা যায় চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের মৃত্যু হয়েছে ৯৩ জনেরও বেশি। স্বল্প সময়ের ভিতর বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭৮৭১ জন রোগীর ও বেশি।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকলে শরীরের তাপমাত্রা হতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। নিম্নে স্বল্প কথায় লক্ষণগুলো বা উপসর্গগুলো এবং চিকিৎসা তুলে ধরা হলো____
লক্ষণ
১.ডেঙ্গুজ্বর হয়ে থাকলে অন্যতম লক্ষণ হল শরীর গা ব্যাথা হয়ে যায়। তবে এ ব্যথা স্বাভাবিক ব্যথার চেয়েও অনেক বেশি হয়ে থাকে। শরীরের চামড়ায় লালচে জাগতে পারে।
২.শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ক্ষুধা কম হওয়া, শরীর মেজ মেস করা এরকম ভাব হতে পারে।
৩.যখন মারাত্মক পর্যায় চলে যায় তখন তীব্র পেটে ব্যাথা দেখা দেয়। এছাড়াও রক্তবমি হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, দাতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকার্য বাধা সৃষ্টি হওয়া, শরীর ঠান্ডা হওয়া বা ঘাম হওয়া ,দ্রুত নাড়ির দ্রুত স্পন্দন এবং ঘুমঘুম ভাব চেতন হারানো ইত্যাদি ধরনের সমস্যা হতে পারে।
৪.মানব দেহে পানি শূন্যতা তৈরি হয় ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম থেকে। তখন পালস রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। রোগী অস্থির হয়ে ওঠে শ্বাস-প্রশ্বাস কমে যায় শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এরকম হয়ে থাকলে সময় না নিয়ে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করানো ভালো।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তি এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। অনেক ক্ষেত্রে জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে।যাকে বলা হয় মারাত্মক ডেঙ্গু। ডাক্তারি ভাষায় বা বইতে বলা হয় ডেঙ্গু হেমোরিজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের রক্ত নালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে এর ফলে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়। ফলে রক্তপাত শরীরের অঙ্গ গুলো অকার্যকর হয়ে থাকে এজন্য এমনকি মৃত্যু ঘটতে পারে।
চিকিৎসা
প্রথমত আমি আপনাদেরকে একটি কথা বলতে চাই যে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার পূর্বে সবচেয়ে যেটি বেশি জরুরী সেটি হল মশার কামড় রোধ করা এবং মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা ডেঙ্গু জ্বর রোধ করার প্রধান কারণ হিসেবে অন্যতম। এ ছাড়াও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আরো অনেক ধরনের সতর্কতা রয়েছে।
*ডেঙ্গু মশা বা ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে থাকে, তবে সবসময় যে সকাল থেকে সন্ধ্যায় মশা কামড়াতে পারে বিষয়টি তেমন না রাতেও কামড়াতে পারে। এজন্য ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাবেন।
*ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকায় প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পড়তে হবে যেমন: ফুলহাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট, মুজাএবং জুতা পড়ুন।
*ঘরের দরজা জানালায় ও ভেন্টিলেটরে মশারির জাল ব্যবহার করতে পারেন আর যারা গ্রামে বসবাস করেন তারা ধুপ ব্যবহার করতে পারেনএবং ঘরের দরজা-জানলা আটকে রাখবেন।
*এছাড়াও যেটি আপনাকে সর্বপ্রথম করতে হবে সেটা হলো মশার বংশবিস্তার ধ্বংস করতে হবে আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে কোনভাবেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না। কারণ যেসব মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে থাকে তারা সাধারণত বাড়িতে এবং আশপাশের বাসা বাঁধে। এছাড়াও বেশিরভাগ টায়ার, ফুলের টপ, ডাবের খোসার মধ্যে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যায়। সেজন্য এ ধরনের অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা যাবে না।
*গাছের টব , পানি রাখার পাত্র, পশুর খাবারের পাত্র এবং ফুলদানি পরিষ্কার করতে হবে। কেননা এ থেকেও ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে। এগুলো সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যদি প্রতিদিন নাও পারেন তবুও সপ্তাহ অন্ততপক্ষে একবার পরিষ্কার করতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গু জ্বরের মূলত তেমন কোন চিকিৎসা নেই। রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে পরিস্থিতি যদি জটিল হয়ে যায় তাহলে কোনভাবেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীকে কোনভাবে বাসায় বসে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। রোগীকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
বাসায় থাকা অবস্থায় কখনোই প্যারাসিটামল ব্যতীত অন্য কোন এসপিরিন বা ব্যথা নাশক এবং জন্য শো ক ঔষধ বা সিরাপ সেবন করতে দেওয়া যাবে না। আক্রান্ত রোগীকে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয়খাবার খেতে দিতে হবে। তরল জাতীয় খাবারের তালিকা রয়েছে পানি, সুপ , দুধ ফলের রস। আর রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হবে।