সিজারের পর শোয়ার নিয়ম

নারীদের বাচ্চা প্রসব দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি হলো সাধারণ ডেলিভারির মাধ্যমে অন্যটি হলো সিজারিয়ানের মাধ্যমে। এখন প্রশ্ন হল সিজারের  শোয়ার নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে কি ? এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা পাবেন।


সিজারের পর শোয়ার নিয়ম


সন্তান জন্মদানের পর ঘুমহীন  দিনগুলো এবং রাতগুলো খুবই কষ্টকর দিনগুলো ভুলবার মত নয়।সন্তানের পিতা-মাতা হওয়া সত্যি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা।তবে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মানোর পরে সিজারিয়ান নারীদের প্রথম কয়েক সপ্তাহ কষ্টে দিন পার হয়।এ সময় খুব বেদনাদায়ক এবং প্রত্যেক নারীকে ধৈর্য সাহসের  প্রয়োজন হবে। তবে এটি স্বল্প সময়ের জন্য। এটির মধ্যে দিয়ে প্রত্যেক সিজারিয়ানারির  পথ পাড়ি দিতে হয়। 



সিজারের পরে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি ও পেটের আয়তন বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক নারীদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে করতে কষ্ট হতে পারে।এরফলে ঘুমিয়ে অসুবিধা দেখা যায়। যদিও ডাক্তাররা এ জন্য যে ওষুধগুলো আপনাকে দেয় সেগুলো সেবনে আপনাকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে। ভালো একটা ঘুম হয়। কারণে ভালো শ্বাস-প্রশ্বাস হয় যার ফলে ঘুমানোতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় না।




আপনি যত আরামদায়কভাবে ঘুমাতে পারবেন আপনার পেটের বেশি গুলির স্ট্যান্ড কমিয়ে দেবে ফলে আপনার  সিজার বা কাটা স্থানের উপর চাপ কম পড়বে। 



ঘুমানোর জন্য নির্দিষ্ট কোন বিশেষ অবস্থান নেই এর একটি কারণ সেটি হলো সব নারীদের জন্য সমান সমস্যা কাজ করে না। আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত আরামদায়কভাবে ঘুমাতে না পারবেন ততক্ষণ পর্যন্ত উপযুক্ত অবস্থান চালিয়ে যেতে হবে।এটি একটি প্রক্রিয়া মাধ্যমে যেতে হবে। নিচে সিজারের পর শোয়ার নিয়ম গুলি সম্পর্কে কিছু ধারণা দেওয়া হলো:


চিৎ হয়ে ঘুমালে ভালো হয়


*সিজার বা অস্ত্রোপাচারের পরে চিৎ হয়ে ঘুমানো সবচেয়ে ভালো এবং আরামদায়ক। এভাবে ঘুমালে বা শুয়ে থাকলে আপনার কাঁটা স্থানটি বা পেটের চর্বির উপর কোন ধরনের চাপ পড়বে না। এছাড়াও আরো আরামদায়কভাবে ঘুমাতে আপনি চাইলে হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে রাখতে পারেন।


চিৎ হয়ে ঘুমানোর পাশাপাশি একটু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যখন আপনি বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করবেন ঠিক তখনই আপনার পেটের কাঁটা স্থানে বা চর্বির উপর চাপ পড়তে পারে। এটি একটি সতর্কতার জায়গা। যদি এরকম অবস্থার সম্মুখীন হন তাহলে কয়েক সপ্তাহ পরে আপনি পাশের দিকে ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন। যেসব নারীদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা এটি না করলে আরো বেশি ভালো হবে।





কাঁধ  হয়ে বা পাশের দিক ফিরে



সিজারের পর আপনি কাঁধ হয়ে বা বাম পাশে ফিরে  ঘুমাতে পারেন। এভাবে ঘুমালে দেহের সর্বোচ্চ এবং হজমে বেশ সহায়তা করে যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপযোগী। আপনি চাইলে পেট এবং নিতম্বের বালিশ ব্যবহার করতে পারেন।বাম দিকে ফিরে ঘুমালে সবচাইতে একটি ভালো সুবিধা হলো আপনি উঠার সময় কোন উপর ভর দিয়ে উঠতে পারবেন এবং হাত দিয়ে ঠেলে উঠে বসতে পারবেন, বিছানা থেকে সহজেই উঠতে পারবেন। ওঠার সময় শ্বাস ত্যাগ করুন।



শরীরের উপরের অংশটুকু উঁচুতে রাখলে ভালো হয়

সিজারের পর বালিশ হল এক প্রকার জীবন রক্ষক এই সময়ে। মাথা থেকে পিঠের অংশটুকুর নিচে  প্রয়োজন মত আরামদায়ক বালিশ দিতে পারেন।যাতে করে আপনার পুরো শরীরটি উপরের দিকে থাকে এর পাশাপাশি মাথা ও ছোট থাকে এতে পেটের উপর তেমন চাপ পড়বে না এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে এবং সহজে ঘুমের সুবিধা হবে।



দোলনা  চেয়ারের ব্যবহার


*বেশি কিছু নারীদের ক্ষেত্রে যে কোন অবস্থানে আরামদায়কভাবে ঘুমানো সত্যি খুব কঠিন হয়ে পড়ে।তাদের জন্য দোলনা বা চেয়ারে ব্যবস্থা করতে পারেন অনেক নারীরা দাবি করেছেন যে তাদের এভাবে ঘুমাতে খুব আরামদায়ক লাগে। কিন্তু বিছানার ঘুমের মতো  হবে না। তবে এতে এখান থেকে সহজে উঠতে পারবে এবং  স্বাচ্ছন্দ্যে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে শিশুকে। 



সিজারের কাঁটা স্থান থেকে আরোগ্য লাভের জন্য শোয়ার বিশেষ পরামর্শ রয়েছে



এটি স্বল্প সময়ের জন্য খুবই বেদনাদায়ক মুহূর্ত। তবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। আপনার ঘুম যত  ভালো হবে তত আপনি দ্রুত ভালো হয়ে উঠতে পারবেন। 


*পর্যাপ্ত ঘুমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধগুলো সেবন করে থাকবেন বন্ধ করবেন না তার নির্দেশনা ছাড়া।


*রেস্টে থাকতে হবে পরিশ্রম করা যাবে না, সিঁড়ি  উঠানামা বন্ধ করতে হবে, ভারী ওজন তোলা যাবে না, এই নির্দেশনা গুলো যদি না মেনে থাকেন তাহলে জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন এবং ঘুম হারানোর সম্ভাবনা জেগে উঠতে পারে। শরীরকে যত নিরাময়ের জন্য সময় দিবেন শরীরটা   তত দ্রুত সেড়ে  উঠবে, ব্যাথা কমতে থাকবে এবং ভালো ঘুম দিতে সহায়তা করবে। 




*আপনি একটু ভালো বোধ করার পর বাসার ভিতরে হালকা-পাতলা হাঁটাচলা করবেন এতে করে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাবে।  ভালো একটি ঘুম হবে।


*সবচেয়ে বেশি  খাদ্য তালিকার দিকে গুরুত্ব দেওয়া।  খাবার মধ্যে বেশি পরিমাণে এন্টিইনফ্লেমেটরী  খাবার এবংবেরি ও ব্রোকলির মত ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি থাকা খাবারগুলি খেতে হবে এর পাশাপাশি বাদাম এবং বীজগুলি খাবার খেতে পারেন। সঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া প্রয়োজন। 



*যেসব সিজার নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্য হবে তাদের প্রচুর পরিমাণে পানীয় খাবার এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।


*বিছান থেকে প্রথম কয়েক সপ্তাহ ঘন ঘন ওঠার চেষ্টা করবেন না।যখন আপনার শিশুকে দুধ খাওয়াবেন বা প্রয়োজন বোধ হবে তখন আপনার স্বামী এবং পরিবারের অন্য কোন ব্যক্তিকে আপনার কাছে নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করবেন।


শেষ কথা

সিজারিয়ান মায়েদের প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সেটি হল তাদের যত্ন করা তাদের মানসিক সাপোর্ট দেয়া, তাকে সময় দেয়া, এগুলো সবচেয়ে বেশি দরকার একজন সিজারিয়ানের জন্য ওষুধের চেয়েও বেশ কার্যকরী। আপনি যত তাকে সাপোর্ট দিবেন সে তত দ্রুত সেড়ে  উঠবে। এই সময়টি একজন মা ও বাবাসহ ফ্যামিলিতে বসবাসকৃত সবার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার একটি জায়গা। দোয়া করি পৃথিবীর সকল সিজারিয়ান মায়েরা দ্রুত কোন ঝামেলা ছাড়া দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।  ধন্যবাদ। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url