লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয় || লো প্রেসারে কি স্ট্রোক হয়

প্রিয় ভিউয়ার্স আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের মাঝে লো প্রেসার নিয়ে কিছু অতীব  প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরব। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ সহকারে পড়বেন। এছাড়াও লো প্রেসারের হার্ট অ্যাটাক হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন আর দেরি না করে এবার শুরু করা যাক।


লো প্রেসারে কি হার্ট এটাক হয়


মাঝেমধ্যে মাথা ঝিমঝিম করে ওঠা, ব্ল্যাক আউট বা  মাথা ঘুরে যাওয়া কে লো প্রেসার হিসেবে ধরা হয়। প্রায় মানুষই এরকম অবস্থার সম্মুখীন হন। আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। 


হৃদপিণ্ড মানব শরীরে একটি পাম্পিং সিস্টেমের মত কাজ করে থাকে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হৃদয় রক্তকে পাঠিয়ে দেয়। রক্ত শরীরের নানান কোষে অক্সিজেন ও অন্যান্য নিউট্রিশন  সঞ্চালন করে আর এর পাশাপাশি শরীরের ভেতর দূষিত রেচন পদার্থ ও কার্বোডাই-অক্সাইড শরীর থেকে বের করে নিয়ে আসে। এই রক্ত যখন শরীরের একটি ভেইনের মধ্য দিয়ে যায় তখন সেই পার্শ্ববর্তী দেয়াল গুলিতে গুলিতে রক্ত প্রবাহ চাপ সৃষ্টি করে।




উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা থাকে তবে লো প্রেসারে হার্ট অ্যাটাক হয় না তবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে হার্টের সমস্যার কারণে হঠাৎ করে লো প্রেসারের দেখা দিতে পারে।



এই রক্ত প্রবাহ চাপের কারণে শরীরের সর্বত্ব জায়গায় রক্ত সরবরাহ করে। যখনই এই রক্তে প্রবাহের চাপ কমে আসে তখনই লো প্রেসারে পরিণত হয়। আর তখনই দেখা দিতে পারে হার্টের মতো রোগের সমস্যা, আবার প্রতিনিয়ত এই বাড়তে থাকা চাপ স্ট্রেস মত কুড়ি থেকে ডেকে আনছে কেউ উচ্চ রক্তচাপের মত জটিল সমস্যা।



হাই প্রেসার ও লো প্রেসার বোঝার উপায়


যখন বিপি মেশিন দিয়ে ব্লাড প্রেসার মাপা হয় তখন সিস্টোলিক বিপি কে হাই  প্রেসার বলে থাকি আর নিচের দিকে  ডেস্টলিক প্রেসারকে লো প্রেসার বলে থাকি।


হু এর নির্দেশিকা অনুযায়ী যখন কোন ব্যক্তির ব্লাড পেশার যদি  ১০০/৬০ এর কম হয় তাহলে লো প্রেসার ধরা হয়।   আর যদি    ১৪০ / ৯০ এর বেশি হয় তাহলে তাকে সাথে সাথে ডাক্তার ের সম্মুখীন হতে হবে এবং ওষুধ চালু করতে হবে।


পাশাপাশি লাইফস্টাইল এর পরিবর্তন ঘটাতে হবে যাকে এক কথায় বলা হয় লাইফস্টাইল মডিফিকেশন। এ ধরনের সমস্যা ২০ বছরের যুবক যুবতীদের হতে পারে। এটিকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপ। আর স্বাভাবিক রক্তচাপ হল ১২০ / ৮০ এর কম। 


আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে


স্বাভাবিক রক্তচাপ সিস্টোলিক ১২০ বা তার কম এম এম এইচ জি, ডিস্টোলিক: ৮০ এম এম এইচ জি.


উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন)  সিস্টোলিক:  ১৪০ এম এম এইচ জি বা তার বেশি ডিস্টোলিক: ৯০ এম এম এইচ জি or higher.


নিম্ন রক্তচাপ সিস্টোলিক: ১০০ বা তার কমএম এম এইচ জি, ডিস্টোলিক: ৬০ এম এম এইচ জি



মানব শরীরের উচ্চ রক্তচাপ যেকোনো সময় প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে আমরা তা সকলেই কম বেশি জানি তবে লো ব্লাড প্রেসার হলে কেউ কেউ তা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামায় না অনেকেই স্বাচ্ছন্দে জীবন কাটিয়ে দেন দীর্ঘ দিন যাবত। কেননা লো প্রেসারের কোন সমস্যা দেখা যায় না অনেকের শরীরে।আরো স্পষ্ট বলতে গেলে অল্প বয়সের কারণে। সকল রোগীদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক না। 

 



পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে লো প্রেসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেক মহিলারা বুঝতেই পারেন না তিনি যে লো ব্লাড প্রেসারের সমস্যায় ভুগতেছেন। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে হাই প্রেসার ১১০ এম এম এইচ জি তে পৌঁছালেও সে ক্ষেত্রে তেমন কোন সমস্যা নেই বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন ভারতের বিখ্যাত চিকিৎসক শুদ্ধ সত্য চট্টোপাধ্যায়। অনেকের লো ব্লাড প্রেসার এর কারণে শরীরে নানান রকমের সমস্যা সৃষ্ট সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন। যে ধরনের সমস্যা হতে পারে তা নিচে আলোচনা করা হলো:



মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করা, চোখে অন্ধকার দেখা, মাঝেমধ্যে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, সব সময় দুর্বল লাগা। পাশাপাশি ডাক্তারগণ বা  চিকিৎসক বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করেদেখতে পারেন তার শরীরে অন্য কোনো রকমের সমস্যা আছে কিনা।



যেমন:হার্টের সমস্যা: ব্লাড প্রেসার কমে যায় হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে হাটের কিছু কিছু সমস্যা জনিত কারণে। যাকে এক কথায় বলা হয় হাইপোটেনশন আরো স্পষ্টভাবে বলতে গেলে হৃদ যন্ত্রের  পাম্পিং ক্ষমতায় অক্ষমতার দরুন এই সমস্যার সৃষ্টি। 


গর্ভধারণ

সাধারণত দেখা যায় যে গর্ভধারণের কারণে ব্লাড প্রেসার বাড়ে কিন্তু সব সমাজে এমন হবে তা নয় মাঝেমধ্যে উল্টো হতে পারে সন্তান প্রসবের পর প্রেসার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে


ডিহাইড্রেশন

দেহ থেকে অধিক পরিমাণ পানি বের হয়ে গেলে ব্লাড প্রেসার কমতে থাকে।


হাইপোথাইরয়েডিসম

 থাইরয়েডের গ্রন্থির কাজ কমে যাওয়াকে বুঝায়।


রক্তপাত

কোন দুর্ঘটনা বা সার্জারি করার সময় শরীর থেকে অধিক পরিমাণ রক্ত বের হয়ে গেলে রক্তচাপ পড়ে যায়।


অপুষ্টি

ভিটামিন বি ১২ ,আয়রন বা ফোলেটে ঘাটতি থাকলে লোপ্রেসার দেখা যায়।


ইনফেকশন

রক্তে কোন জীবাণু প্রবেশ করলে বা ইনফেকশন হলে ব্লাড প্রেসার খুব দ্রুত গতিতে কমে যায় যার ফলে মারা যেতে পারে।


এলার্জি

অনেক সময় এলার্জিজনিত সমস্যার কারণে ব্লাড প্রেসার হঠাৎ করে কমে যায়।



এ থেকে প্রতিকার


*পাওয়ার জন্য লো প্রেসার কেন হয় সেজন্য অবশ্যই রোগীকে ডাক্তারের নিকট যেতে হবে।


*আর লো প্রেসার দ্রুত স্বাভাবিক প্রেসারে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তেমন কোন ওষুধ নিয়ে যা সাথে সাথে প্রেসার বৃদ্ধি বাড়ায়। 


*লো প্রেসার প্রতিকারের জন্য ওআরএস খাওয়ালে ভালো হয়। আর যদি রোগী ওআরএস না খেতে পারে তাহলে স্যালাইন ওয়াটার দিতে হবে। 


*বাড়িতে বসে পানির সাথে নুন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। 


*বিছানাতে শুয়ে পড়ে পা একটু উঁচু বালিশে তুলে রাখলে ভালো হয়। 



প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে


প্রেসার  লো হলে বেশি বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে। কারণ লো প্রেসার এর ফলে শরীরে পানি শূন্য হয়ে পড়ে ফলে রক্তের ঘনত্ব কমে যায়। এতে রক্ত চাপ কমে যায়। তাই পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খেতে হবে যেমন স্যুপ , কফি, ডাবের পানি, ফলের রস, ঘোল,, দুধ, চিনি ও লবণ দিয়ে লেবুর জুস খাওয়ার মাধ্যমে রক্ত চাপ বাড়ানো যেতে পারে।



লবণ ও পানির চেয়ে খাবার স্যালাইন শরীরের জন্য বেশ  উপযোগী। নিম্ন রক্তচাপের জন্য। যদি রোগীর ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করবেন।  


এছাড়াও রক্তস্বল্পতা দূর করার জন্য শরীরে প্রয়োজন আয়রন, বিবার বি১২, ভিটামিন সি, ও ফলেট। লেবু জাতীয় ফল , সবুজ শাকসবজি, মেটে আলু, মসুর ডাল ও শুদ্ধ ডিমে থাকে ফলে এছাড়াও খেতে পারেন গরু ,মুরগির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, লাল শাক, কচু শাক, শাপলা,  সিমের বিচি , পালন শাক, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, শুকনা ফল ইত্যাদি। এসমস্ত খাবার গুলিতে রয়েছে সোডিয়াম প্রচুর পরিমাণে। 




লো প্রেসারে কি স্ট্রোক হয়


আপনারা অনেকে ভেবে থাকেন যে লো প্রেসার এর কারনে কে স্ট্রোক হয়? প্রিয় ভিউয়ার্স না লো প্রেসারের কারণে  তেমন স্ট্রোক  হয় না।  লো প্রেসারের কারণে যেমন সমস্যা রয়েছে তেমন কিছু সুবিধা রয়েছে। লো ব্লাড প্রেসার রোগীদের জন্য স্টোক হওয়ার ঝুকি কম থাকে, কিডনিতে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে, হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

 


লো প্রেসার হাই করার উপায়


লো প্রেসার হাই করার জন্য ইনস্ট্যান্ট কোন ওষুধ নেই। তবে খাবার পানির সাথে লেবুর রস, চিনি ও লবন মিশিয়ে পান করালে প্রেসার হাই হতে পারে। কারণ আমরা সবাই জানি লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। পর্যাপ্ত তরল খাবারও পানির খাবার দিতে পারেন। 



উপসংহার

প্রিয় ভিউয়ার্স আশা করি উপরের তথ্যাবলী থেকে কিছুটা হলেও আপনাদেরকে কিছু না জানা তথ্য সম্পর্কে জানাতে পেরেছি। এছাড়াও আরো অন্যান্য সব তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন অথবা নিচে গিয়ে কমেন্ট করুন আপনার কোন ধরনের তথ্য জানারপ্রয়োজন রয়েছে। সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। ধন্যবাদ। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url