সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় বা সি সেলাই সারতে কতদিন সময় লাগে

প্রিয় পাঠক সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায় বা সারতে কতদিন সময় লাগে। এ বিষয়ে অনেকেই জানতে চান আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্যই। এছাড়াও অন্যান্য সব তথ্য জানতে সিজারিয়ান বিষয়ে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

 সিজারের কতদিন পর সেলাই শুকায়



বাংলাদেশের প্রতিনিয়ত সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা  প্রসব করানোর হাড় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণভাবে বাচ্চা  প্রসবের চেয়ে সিজারে বাচ্চা প্রসব ঘটানো একটু ব্যয়বহুল ও মায়ের কষ্টকর জীবন যাপন। যাই হোক কথা বাড়াবো না। মূল কথা ফিরে আসতেছি। সিজারের পর সেলাই শুকাতে বা স্বাভাবিক জীবন যাপনের ফিরতে সাধারনভাবে এক  থেকে দেড় মাসের মতো প্রায় সময় লাগতে পারে। দুঃখের বিষয় সবার জন্য একই রকম ঘটবে তেমন নয়। । অনেকের ক্ষেত্রে এর চেয়েও স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরতে অনেক সময় লেগে যায়।



প্রসূতি  নারীদের সুস্থতা নিশ্চিত করে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেকআপে থাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রসূতি নারীর সাবেক অবস্থায় ফিরতে যাওয়ার পূর্বে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় হালকা পেট কামড়ানো ভাব দেখা দিতে পারে।রক্ত অথবা স্রাব  বয়ে  যেতে পারে যোনিপথ দিয়ে। এর সময়সীমা হতে পারে এর থেকে দেড় মাসের মতন। এ সময়ে কিছুটা চাকা চাকা আকৃতির রক্ত যেতে পারে সাথে পেট কামড়াতে পারে।





সিজারের জায়গা বা কাঁটা স্থানে ব্যাথা হওয়ার অনুভূতি ও অবশ লাগা অনুভূতি সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে একই সঙ্গে ব্যথা ও অবস লাগতে পারে। এসব নিয়ে বেশি চিন্তার  কারণ নেই অতিরিক্ত পেট ব্যাথা বা ভারী রক্তপাত কিংবা লক্ষণ নিয়ে ডাক্তার পরামর্শ নিতে পারেন।



সিজার কিন্তু একটি বড় অপারেশনএটি মোটেও ছোট কোন অপারেশন নয়। এটি একটা চ্যালেঞ্জ সিজারের পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়াটা। নবজাতক শিশুর যত্নে আর সাথে নিজের যত্ন নেওয়াটাও অধিক গুরুত্বপূর্ণ অনেক মায়েরা এই অবহেলাটা করে থাকেন। নিজের যত্ন তেমন একটি নেন না। এর ফলে স্বাভাবিক অবস্থায় এবং নিজের শারীরিক ফিটনেস ফিরে পেতে অনেক সময় লেগে যায়। 






সিজারের পর সেলাইয়ের যত্ন



সিজারের পর পরই ঐ  হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ডাক্তাররা কাঁটাস্থানটির যত্ন কিভাবে নিতে হবে তা ঐ  জায়গা থেকে রিলিজ নেয়ার সময় আপনাকে বলে দেয়া হবে। সময় যেসব উপদেশ তারা বলে থাকে সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব।



১. সিজারের জায়গাটি বা কাটা  স্থানটি সাবান ও পানি দিয়ে দিনে কমপক্ষে একবার করে আলতো ভাবে পরিষ্কার করুন।তবে সতর্কতার সাথে বেশি জোরে ঘষা-মাজা করা যাবে না।পরিষ্কার করার পরে জায়গাটি শুকনো গামছা বা টাওয়াল দিয়ে ভালোমতো শুকিয়ে নিবেন।



২.আরামদায়ক পোশাক পড়ুন ঢিলেঢালা পোশাক পড়ুন। কারণ এতে তেমন একটি টাইট বাজবে না স্বস্তি সহকারে চলাফেরা করতে পারবেন। প্রয়োজনের অন্যতমের কাপড় যেমন সিন্থেটিক কাপড়ের পরিবর্তে সুতির কাপড় পড়তে  পারেন। শরীর তেমন ঘামাবে না সাথে ঘষা লাগবে না। আরাম অনুভব করবেন।

 

৩.অপারেশনের পর আপনাকে যদি শরীরের সাথে মিশে যায় না এমন কোন সুতা দিয়ে পেট সেলাই করে থাকলে তা সাধারণত সিজারের বা পার্শনের পাশ থেকে সাত দিন পর খুলে ফেলা হয়। ঐ  হাসপাতাল থেকে যদি আপনাকে এ ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে অবশ্যই আপনি সময়মতো স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গিয়ে সেলাই কাটিয়ে আসবেন।




সিজারের পর ইনফেকশন হওয়া সম্ভাবনা


সিজারে পর অনেকের ইনফেকশন হওয়ার লক্ষণ দেখা যায় সিজারের জায়গায় এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিছু লক্ষণ নিম্নে দেয়া হলো

১. ফুলে যাওয়া। 

২. অনেক লাল হয়ে যাওয়া। 

৩. ব্যাথা হওয়া। 

৪. সেই জায়গা থেকে পুঁজ ( দুর্গন্ধযুক্ত) পানি বের হওয়া।

এছাড়াও এর পাশাপাশি জ্বর উঠতে পারে।এসব লক্ষণ দেখার সাথে সাথে যত দ্রুত পারেন ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। অবহেলা করলে বা সঠিক চিকিৎসার অভাবে ইনফেকশন রক্তে ছড়িয়ে যাওয়ার পরে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।






সিজারের কাটা জায়গা দ্রুত শুকানোর কিছু পরামর্শ


পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া: সিজার কে কখনোই আমরা সাধারণ অপারেশন হিসেবে ভাববো না। এটি একটি বড় ধরনের অপারেশনের মধ্যে পড়ে। তাই অন্যান্য অপারেশনের মতো পুরোপুরি সেরে ওঠা না পর্যন্ত পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।



সিজারে জায়গাটা বা কাটাযুক্ত স্থানটি শুকন রাখা: কাটা স্থানে যদি ময়লা জমে শরীরের ঘাম  মিশে জমে তাহলে ইনফেকশনহওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ প্রতিরোধ করার জন্য জায়গাটি শুকনা রাখার ফলে যেটি হবে জীবাণু দিয়ে ইনফেকশন অথবা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে সিজারে জায়গাটি বা কাটা স্থানটি খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়।



সন্তানকে দেখবালের পাশাপাশি নিজের যত্ন নিতে হবে বিশ্রাম নিতে হবে। নবজাতকের পরিচর্যা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উপর ছেড়ে দিতে হবে। পরিবারের সবাইকে এ সময় সিজারিয়ান নারীকে সময় দিতে হবে পাশে থাকতে হবে।  



শরীর সচল রাখা:সিজার করার কয়েক সপ্তাহ পর একটু হাঁটাচলা করা। এতে করে শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। কাটা জায়গায় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে দ্রুত শুকায়। তাই নিজেকে যতটা সম্ভবত রাখার চেষ্টা করুন। কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ ভারিকাজ  করা থেকে দূরে থাকবেন। ঘরে হালকা কাজবাজ করতে পারেন। 



খাবারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া: অনেকেই আমরা এই বিষয়টি এড়িয়ে যাই। এ সময় একজন সদ্য সিজারিয়ান নারীকে পর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত বা আঁশ  যুক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। যেমন: সবুজ শাকসবজি ফলমূল। এর পাশাপাশি পরিমাণ মতো দুধ, ডিম, মাছ ও মুরগির মাংস খাবেন। গর্ভকালীন সময়ে ডাক্তারগণ যে আয়রন ফলিক এসি ট্যাবলেট দিয়েছিল তা সিজারের পরবর্তী তিন মাস চালিয়ে যাবেন। মাল্টি ভিটামিন শরীরের জন্য উপকারী। অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে নিবেন। 




কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকলে: অনেকের অপারেশনের পরে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এদের জন্য প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার খেতে হবে। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকলে পেটে চাপ পড়ার ফলে কাটা  স্থান শুকাতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। ডাবের পানি, কলা, সবজির স্যুপ, আঁশ যুক্ত খাবার ,সবুজ তাজা ফল ও শাকসবজি। ইত্যাদি খান।




ব্যাথা হয়ে থাকলে: সিজার করার পর জায়গাটি বেশ কয়েকদিন বেশ ব্যথা থাকবে। অনেকের ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যথা হতে পারে। এ সময়ে কখনোই এন্টিবায়োটিক কোর্স নিতে যাবেন না নিজে নিজে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া। তবে ব্যথা নাশকওষুধ হিসাবে প্যারাসিটামল অথবা আইবুপ্রোফেন  বেছে নিতে পারেন।  





যোনিপথে রক্তক্ষরণ: সিজার বা অপারেশনের পরে যোনিপথ দিয়ে কিছুটা রক্ত বের হতে পারে। এজন্য ব্যবহার করতে হবে ম্যাটারনিটি প্যাড বা স্যানিটারি প্যাড। ভারী বা অতিরিক্ত রক্তপাত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। ইনফেকশন এড়াতে  এই সময়ে কয়েক সপ্তাহ যোনিপথে ট্যাম্পনের  মত কোন কিছু ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং সহবাস থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। 







সিজারের কয়দিন পর সেলাই কাটতে হয়


শরীরের সাথে মিশে যায় এবং সুতা দিয়ে যদি অপারেশনের পর সেলাই করে থাকে সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহ পর বা এক সপ্তাহের মধ্যে সেলাই কাটতে হয়। অবশ্যই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বা হসপিটালে গিয়ে আলোচনা করবেন। তারা আপনাকে বলে দিবে।

 

সিজারের পর সেলাইয়ের যত্ন


সিজারের পর সেলাই যত্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা অনেকের সিজারের পর  ইনফেকশন হয়ে থাকে।অযত্নে অবহেলার কারণে। নিয়মিত হালকা গরম পানি দিয়ে কাটা জায়গাটি পরিষ্কার করবেন। তারপর শুকনো কাপড় দিয়ে পানিগুলো মুছে ফেলবেন। কাপড়টি অবশ্যই নরম হতে হবে। ঘষা লাগে এমন কাপড় ব্যবহার করা যাবে না। আর শরীরেও সুতির কাপড় পরিধান করবেন ও ঢিলেঢেলা কাপড় পরিধান করবেন। ঘষা ও টাইট লাগবে না। ইনফেকশন ও রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। 




সিজারে কসমেটিক সেলাই ভালো নাকি নরমাল সেলাই



যে সব রোগীদের ডায়াবেটিস ও  অন্যান্য সমস্যা থেকে থাকলে তাদের ক্ষেত্রে কসমেটিক সার্জারি করা প্রযোজ্য নয়। সাধারণ অবস্থায় কসমেটিক সার্জারি করা যাবে। সাধারণত কসমেটিক সার্জারি ভালো। যাদের সমস্যা নেই তাদের জন্য। 




ইতিকথা:


সিজার একটি বড় ধরনের অপারেশন। তাই অন্যান্য বড় অপারেশনকে আমরা যেরকম মূল্যায়ন করে থাকি মূল্যায়ন বলতে সতর্কতা অবলম্বন করে থাকি ঠিক একই ভাবে সিজারেও তেমন সতর্কতা অবলম্বন করব। এ সময় সবচেয়ে বেশি জরুরী যেটা সিজারের পর সেটি হল সদ্য মা হওয়া নারীকে পর্যাপ্ত মানসিক সাপোর্ট দেওয়া ও তাকে ভারী কাজ থেকে বিরত রাখা। তার সুবিধা ও অসুবিধা শুনতে হবে।  ইনফেকশনের লক্ষণ হয়েছে কিনা এসব বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url