ব্রেস্ট টিউমার হলে করনীয় || ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়

প্রিয় ভিউয়ার্স আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করব দেশ টিউমার হলে করনীয় কি ? ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়। আজকের আর্টিকেলটি মা ও বোনদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।যারা এ রোগে ভুগতেছেন তাদেরও প্রয়োজন রয়েছে এ বিষয়ে জানার। আর যাদের হয়নি তারাও এই আর্টিকেলটি পড়া মাধ্যমে নিজেদের সচেতন গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। চলুন আর দেরি না করে এবার শুরু করা যাক।



ব্রেস্ট টিউমার হলে করনীয় ?



প্রতিবছর প্রায় ২.১ মিলিয়ন নারীরা সারা বিশ্বজুড়ে স্তনক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন। মহিলাদের  সবচেয়ে স্থান ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনি একটি তথ্য শুনলে হতবাক হয়ে যাবেন একটি পরিসংখ্যান এর মাধ্যমে জানা যায় যে শুধুমাত্র ২০১৮ সালে পৃথিবীতে ৬ লাখ ২৬ হাজার মহিলারা স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন।




কমবেশি উন্নত দেশ বলেন আর উন্নয়নশীল দেশ বলেন অনুন্নত দেশ বলেন প্রায় সব দেশেই এর হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের সকলকে সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। এই রোগ চিকিৎসার আগে রোগের প্রতিরোধ করাটা বেশি জরুরী। প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে এটি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

 

ব্রেস্ট  টিউমার হলে কি করনীয় তা জানার পূর্বে আমাদের জেনে নিতে হবে মূলত ব্রেস্ট টিউমার বা স্তন ক্যান্সার টা কি?




মানব শরীরের যে কোন জায়গার কোষগুলো যখন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় তখন সেগুলো একটি অস্বাভাবিক চাকা বা পিন্ড আকৃতি ধারণ করে। আর এই চাকা বা পিন্ড টিকে বলা হয় টিউমার। টিউমার দুই ধরনের ; ১.বেনাইন বা অক্ষতিকর। ২.ম্যালিগন্যান্ট বা ক্ষতিকর।
 


তুলনামূলকভাবে বেনাইন স্তন টিউমারি বেশি। তবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হল ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যা খুবই ক্ষতিকারক যাকে আমরা ক্যান্সার বলে থাকি।

 


ব্রেস্ট টিউমার হলে আপনাকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তার পরামর্শ চিকিৎসা ও নির্দেশনার উপর আপনাকে চলতে হবে। এছাড়াও ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার ভিতরে রয়েছে সার্জারি বা অপারেশন, রেডিও থেরাপি, ওষুধ(হরমোনাল থেরাপি, টার্গেট থেরাপি, কেমন থেরাপি)।

 


তবে রোগীর ক্যান্সারের গতি প্রগতির  ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে চিকিৎসার একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করে থাকেন। যদি কোন রোগীর অপারেশন করানো হয় এবং তারপর কেমোথেরাপি  এবং রেডিওথেরাপি অথবা অপারেশনের পূর্বে বা পরে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।স্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্য নিম্নে পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলো:




*অপারেশন বা সার্জারি:ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে সার্জারি হচ্ছে চিকিৎসার প্রথম ধাপ।টিউমারের আকার আকৃতির উপর বিচার বিশ্লেষণ করে চিকিৎসক সার্জারি মাধ্যমের টিউমার ও বা তার আশেপাশের কিছু সুস্থ টিস্যু অপসারণ করে থাকেন।



চিকিৎসক সাধারণত দুই ধরনের অপারেশন করতে পারেন একটি হলো স্তন ক্যান্সারের অংশটুকু অপসারণ করা(লাম্পেকটমি )। দ্বিতীয়ত হল সম্পূর্ণ স্তন বা ব্রেস্ট অপসারণ করা (মাস্টেকটমি)।সার্জারি করার সময় যদি কোন ধরনের লসিকাগ্রন্থিতে ক্যান্সার পাওয়া যায় তাহলে সার্জন সাধারণত সেটিও অপারেশন করে ফেলেন।




*কেমোথেরাপি:কেমোথেরাপির মূল উদ্দেশ্য হলো ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করা।ক্যান্সার ধ্বংস করার জন্য  সাইটোটক্সিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

 


*রেডিওথেরাপি:ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলোকে রেডিওথেরাপির উচ্চ শক্তির এক্সরে ব্যবহার মাধ্যমে ধ্বংস করে।এই থেরাপি টা অপারেশনের পর ক্ষত শুকিয়ে গেলে করা হয়। কারণ ক্যান্সার যেন পুনরায় ফিরে আসতে না পারে সেজন্য করে থাকে।



*টার্গেট থেরাপি:টার্গেট থেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা কেমোথেরাপি,হরমোনাল থেরাপি,চেয়ে বেশি কার্যকর। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য  স্বাভাবিক কোষ গুলোর কোন ক্ষতি না করে নির্দিষ্ট কোষ গুলোকে ধ্বংস করতে পারে।এর পাশাপাশি ক্যান্সার দ্রুত ছড়িয়ে পড়া থেকে রোধ করতে পারে।



 

যেখানে কেমোথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, রেডিওথেরাপি কাজ করতে ব্যর্থ হয় সেখানে টার্গেট থেরাপি বেশ ভালো কাজ করে থাকে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও অন্যান্য থেরাপির তুলনায় খুব কম।
 


ব্রেস্ট টিউমার বা স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ জন নারীর ভিতর কমপক্ষে একজন নারীর বিশেষ প্রোটিন এইচ ই আর টু পজিটিভ থাকে। তাই অন্যান্য ক্যান্সার তুলনায় এ ধরনের ক্যান্সার বেশি আগ্রাসী হয়ে থাকে।



এই নির্দিষ্ট প্রোটিনকে ধ্বংস করার জন্য টার্গেট থেরাপি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে   আছে  ল্যাপাটিনিব, ট্রাস্টুজুমাব, পারটুজুমাব, ট্রাস্টুজুমাব, এমটানসিন।







ব্রেস্ট টিউমার চেনার উপায়




*চাকা বা পিন্ডকে টিউমার বলা হয়ে থাকে।ব্রেস্ট বা বগলের নিচে কোন ধরনের চাকা বা পিণ্ড লাম্প  বেনাইন অক্ষতিকারক।যদি পিন্ড  বা চাকা শক্ত হয়ে থাকে এবং তার অবস্থান যদি সহজে পরিবর্তন না হয় তাহলে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরী এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।



*ব্রেস্ট বা স্তনের অস্বাভাবিকভাবে কোন অংশ ফুলে যায় বা ভারী অনুভূতি হয়।


*ব্রেস্ট এর চামড়া যদি ভিতরের দিকে প্রবেশ করে বা টোল পড়ে। 



*ব্রেস্টের চামড়া লাল বর্ণের হওয়া বা ফুসকুড়ি দেখতে পাওয়া।


*পূর্বের তুলনায় ব্রেস্টের আকার আকৃতি পরিবর্তন হওয়া। 


*ব্রেস্ট  বা স্তনবৃন্ত  ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।
 

*ব্রেস্টের ভিতর দিয়ে রক্ত অথবা জলি পদার্থ বের হওয়া। 





ব্রেস্ট টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ


পেটে দীর্ঘদিন যাবত বদ হজম হওয়া বা পেটের ভিতর অস্বস্তি অনুভূতি হওয়া।  আবার খাদ্য গ্রহণ করার পর পেট ফুলে যাওয়ার অনুভূতি ও হতে পারে। এছাড়াও হালকা বমি বমি ভাব, খাদ্যের প্রতি অরুচি বা ক্ষুধামন্দ, পেটে জ্বালাপোড়া অনুভূতি, হঠাৎ করে ওজন কমতে থাকা , মলের সাথে রক্তপাত ও রক্ত বমি হওয়া, পেটে ব্যথা, গায়ের রং হলুদ হয়ে যাওয়া ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া। খাবার খেতে বা গিলতে সমস্যা হওয়া। 






ব্রেস্ট টিউমার বা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি


নির্দিষ্ট করে এখন পর্যন্ত ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারের কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু রিক্স ফ্যাক্টরের কারণে এর সম্ভাবনা বাড়ে।বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে।জেনেটিক কারণ বা জিন মিউটেশনের (brca1 and brca 2)ফলে  হয়ে থাকে।


 

একই পরিবারের কোনো সদস্যের রোগ হয়ে থাকলে ও ৪০ বছরের কম বয়সী একজন আক্রান্তরোগীর কাছ থেকে এ রোগের সম্ভাবনা হতে পারে।
 


নারীদের অল্প বয়সের ঋতুস্রাব দেখা দিলে অথবা যদি খুব বেশি বয়সে আবার ঋতুস্রাব বন্ধ হয় সেক্ষেত্রে।মহিলাদের এরূপ বেশি হয়ে থাকে পুরুষের তুলনায়। এছাড়া যে সকল মা ও বোনদের একটি স্তনের ক্যান্সার হয়েছে তাদের অন্য স্তনেও ক্যান্সার হওয়ার বেশ সম্ভাবনা থাকে।




ব্রেস্টটিউমার হওয়ার কারণ



*বেশি বয়স হওয়া সত্বেও বিয়ে না করা এছাড়াও ৩০ বছর বয়স পার হওয়ার পর প্রথম সন্তান মা হওয়া কিংবা বাচ্চা না নেওয়া নারীদের ব্রেস্ট টিউমার বা স্তন ক্যান্সার ঝুঁকি বেশি থাকে।

 

*আবার বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ালেও ব্রেস্ট টিউমার দেখা দিতে পারে।



*অতিরিক্ত ওজন ,স্থূলতা, মোটেও শারীরিক পরিশ্রম না করা, দীর্ঘদিন যাবত গর্ভনিরোধক ওষুধ সেবন করা, অ্যালকোহল পান করা। 





ব্রেস্ট টিউমার শনাক্তকরণের নিয়ম


ব্রেস্টের বা স্তনের ভিতর চাকা  বা পিন্ডি আকৃতি ধারণ করবে এবং খুব শক্ত হবে অস্বস্তি লাগবে।এমতাবস্থায় ডাক্তার নিকট খুব শিগগিরই যেতে হবে। ডাক্তার আপনাকে দেখার পর সন্দেহ করে থাকলে কিছু টেস্ট দিতে পারে। টেস্টগুলো হলো: এফএনসি, মেমোগ্রাম, ব্রেস্ট বা স্তন এবং বগলের আলট্রাসনোগ্রাম, কোর বায়োপসি এবং হিস্টো পেথোলজি।




বেস্ট টিউমারের প্রতিকার


১.ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা।
 
২.প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা।

৩.অতিরিক্ত চর্বির যুক্ত খাবার মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।

৪.বাচ্চাকে নির্মিত বুকের দুধ পান করা।
 
৫.সবুজ জাতীয় শাকসবজি খাওয়া ও ফলমূল খাওয়া ও মদ পান থেকে বিরত থাকা





উপসংহার

প্রিয় ভিউয়ার্স উপরে আলোচনা থেকে আপনারা অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।বর্তমানে এটি একটি জটিল রোগ। আমরা সবাই সাবধানে থাকবো। আশা করি আপনারা সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন সেই দোয়া কামনা করি। ধন্যবাদ। 
 



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url