বুকের দুধ খাওয়ানো বনাম ফর্মুলা খাওয়ানো শিশুর সংখ্যা কত

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তারা একটি কথা সর্বদা বলে থাকে ব্রেস্ট মিল্ক ইজ বেস্ট। বুকের দুধের উপকারিতা যত প্রকার ফর্মুলাদুধ রয়েছে  তার চেয়ে বেশি উপকারী। সৃষ্টিকর্তা ধারা বুকের দুধ মানব শিশুদের জন্য এক প্রকার ডিজাইন করা হয়েছে এবং এই দুধ শিশুদেরকে সুস্থ রাখতে প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট চর্বি এবং খনিজ গুলির মতো সকল প্রকার পুষ্টি রয়েছে।

বুকের দুধ খাওয়ানো বনাম ফর্মুলা খাওয়ানো শিশুর সংখ্যা কত




মায়ের বুকের দুধ



মায়ের দুধ একটি জীবন্ত অলৌকিক তরল দুধ যা একটি আল্লাহতালার নেয়ামত। মাতৃত্বের দুধ একটি শিশুকে তার পরিপূর্ণ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। এছাড়াও মা তার শিশুর অসুস্থ ও শারীরিক এন্টিবডি তৈরি করবে যা অসুস্থতার সাথে লড়াই করতে বেশ সাহায্য করবে এবং মা ও  শিশু দুজনকেই সংক্রমণ থেকে হেফাজত করবে।

বুকের দুধে রয়েছে এক হাজার টিরও বেশি প্রোটিন অন্যদিকে ফর্মুলা দুধে কেবলমাত্র এক বাদুটি প্রোটিন। ফর্মুলা দুধে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। 

ফর্মুলা দুধ



ফর্মুলা দুধ তৈরি করা হয় মায়ের দুধের প্রতিলিপি হিসেবে যেমন: গরুর দুধ থেকে কৃত্রিম ভিটামিন, খনিজ এবং হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাটের মত পুষ্টি উপাদান গুলো ফর্মুলা দুধের সাথে যোগ করে তৈরি করা হয়। ফর্মুলা দুধ খেলে শিশুদের হজম করা কঠিন হয়ে পড়ে।গরুর দুধে থাকে লবণ বা সোডিয়াম যার শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।




বেশিরভাগ ফর্মুলা দুধের সাথে যোগ করা হয়ইমালসিফায়ার এবং স্টেবিলাইজার সহ স্কিমড  গরুর দুধ।  ফর্মুলা দুধের চর্বি ভাঙ্গা খুব কঠিন এবং শিশুর পক্ষে তা হজম করাও খুব কঠিন বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং দেশ ভেদে পুষ্টির গঠনও পরিবর্তন হয়। 



ফর্মুলা দুধের উপাদান গুলো নিতে দেওয়া হল:

*বিশুদ্ধ গরুর দুধের ঘোল ও ক্যাসিন প্রোটিন। 

*বিভিন্ন উদ্ভিদভিত্তিক তৈরি যেমন সয়াবিন তেলের চর্বি, সূর্যমুখী তেল, পাম তেল। 

*ল্যাকটোজ  হিসেবে ব্যবহৃত কার্বোহাইড্রেট। 
ভিটামিন এবং খনিজ মিশ্রণ ও অ্যামিনো এসিড এবং এনজাইম। 


*ফর্মুলা দুধে শিশুদের যে ধরনের ঝুঁকি থাকে

*শিশুদের অ্যান্টিবডি গুলো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়ে। 

*কিছু উচ্চ ঝুঁকি থাকে ফিড অসহিষ্ণুতা এবং নেক্রোটাইজিং এবং এন্টারো কোলাইটিস। 

*ফর্মুলা দুধ গ্রহণে হজম হতে সময় লাগে মায়ের দুধের তুলনায়। 

*শিশুদের মলের রং চেঞ্জ হয় বাদামি কালার হয়ে থাকে এবং অনেক গন্ধ হয়। অন্যদিকে বুকের দুধ গ্রহণের আলগা হলুদ ও মল নরম হয় এবং গন্ধ কম হয়। 

*শিশুদের পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

 


শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধ অধিক প্রয়োজনীয় এর কোন বিকল্প নেই।


বাংলাদেশ জনমিতি  ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে শিশু জন্মের  ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ার হার ছিল ৬৫ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী জানা যায় এই জরিপ  ছিল ২০১৭ সালের। আবার নগর স্বাস্থ্য জরিপে বলা হয়েছে ২০২১ সালের শহর এলাকায়  এর হার ৫২শতাংশ।





নগর স্বাস্থ্য জরিপ ২০২১ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডবলু এইচ ও জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ এর তথ্য অনুযায়ী বাচ্চা জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে পারলে শিশুর  প্রয়োজনে পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। এতে করে কম মৃত্যু ঝুঁকি  থাকে।


তবে বাংলাদেশে শিশু জন্মের প্রথম ছয় মাসের শুরুতে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না বরং শহর এলাকায় এই হার দিন  দিন কমছে।  বুকের দুধ খাওয়াতে চান এমন মায়েরা পাচ্ছেন না সঠিক দিকনির্দেশনা বেশিরভাগ ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর প্রবণতার বৃদ্ধি পায় বিভিন্ন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী নিকট থেকে।


দেশের বেশিরভাগ ফর্মুলা দুধ পান করিয়ে থাকে চাকরিজীবী মায়েরা বা কর্মজীবী মায়েরা। আবার কিছু কিছু মায়েরা মনে করেন যে ফর্মুলা দুধ বুকের দুধের চেয়ে অধিক পুষ্টিকর। ফর্মুলা দুধের হার  বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। 
 


বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ বা বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভেএর তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে এ দেশে শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর শতকরা হাড় ছিল ৬৫% . এই জরিপটি  পরিচালনা করেন জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। 


২০১১ সালের একই জরিপে এ হারের সংখ্যা ছিল৬৪ শতাংশ। দেশের ১১ টি সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণাও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর ২০২১ সালের দেখতে পাই যে এর হার ৫২ শতাংশ এর কম।



এছাড়াও ডব্লিউ এইচ ও এবং ইউনিসেফ এর যৌথভাবে এক জরিপে একটি বিশেষ তথ্য পাওয়া যায়।দেশের ৯৮ শতাংশ নারীদের ইচ্ছা হল ছয় মাস পর্যন্ত কেবলমাত্র শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো। তবে সঠিক পরামর্শ না পাওয়ার কারণে তাদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।


একটি বিষয়ে শুনলে আপনি হয়তো অবাক হতে পারেন। আর অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক কেননা শিশুকে ফর্মুলা দুধ পান করানোর প্রায় ৬০ শতাংশ মত পরামর্শ প্রদান করেনপেশাদার চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য সেবাদাতারা।


উক্ত জরিপটি  টি বাংলাদেশ সহ ৮ টি দেশের ৮৫০০ বাবা -মা ও অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাস্থ্য কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে জরিপটি করা হয় এবং ২০২২ সালের জরিপটি  প্রকাশ করা হয়।




দৈনিক বাংলা পত্রিকার একটি জরিপে দেখতে পেলাম যে ৫৫% মা ৬ মাসের পূর্বেই শিশুকে ফর্মুলা দুধ পান করিয়েছেন। তার ভিতর অধিকাংশই শিশু সন্তান প্রসব করেছেন হাসপাতালে।অতএব একটি বিষয়ে স্পষ্ট যে, ঘরে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের তুলনায় হাসপাতালের জন্মগ্রহণকারী শিশুরা ফর্মুলা দুধের হার শতকরা ২০শতাংশ বেশি। 



সর্বোপরি শিশুদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মায়ের দুধের কোন বিকল্প নেই। আর যদি কখনো ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হয় তাহলে শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। যথাপরি  ফর্মুলা দুধ না খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দিব যদি মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের   নিকট শরণাপন্ন হবেন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url