ব্রেন টিউমার হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।মানসিক সাপোর্ট ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।গরীব দুঃখীও নিম্ন আয়ের শ্রেণী মানুষদের জন্য।নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ও যথোপযুক্ত সময়ে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব।অনেকেই জানিনা ব্রেন টিউমারে যদি অপারেশন করতে হয় তাহলে কি পরিমান অর্থব্যয়বহুল হয়।আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে বিস্তারিত জানবো ।
ব্রেন টিউমার অপারেশন খরচ বাংলাদেশ
ব্রেন টিউমার অপারেশনের ক্ষেত্রে নির্ধারিতভাবে খরচ বলা কষ্টকর।উন্নত মানের হাসপাতালের অপারেশন খরচ একটু বেশি আবার সরকারি হাসপাতালে অপারেশন খরচ কম।এজন্য নির্ধারিতভাবে কোন কিছু বলা যাচ্ছে না তবে একটি ধারণা দেওয়া যাবে।
সুনামধারী হাসপাতালগুলোতে সুবিধা এবং দক্ষতা এর পাশাপাশি অপারেশনের কার্যাবলী বা সার্জন খরচ গুলো উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করে থাকে। অর্থাৎ বড় মানের বা বিখ্যাত হাসপাতাল এবং অভিজ্ঞ নিউরোসার্জনদের উন্নত চিকিৎসার কৌশল এর পাশাপাশি বিশেষ আধুনিক সরঞ্জামের কারণে খরচের পরিমাণ বা উচ্চ খরচ ধার্য হতে পারে।
এমআরআই স্ক্যান, সিটি স্ক্যান ও বায়োপসির মত বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পদ্ধতির মাধ্যমে ব্রেন টিউমার নির্ণয় করা হয়। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসা খরচ বেড়ে যায়।এছাড়াও ব্রেন টিউমার বিভিন্ন ধরনের হয়। এক্ষেত্রে অপারেশনের জটিলতা নির্ধারণের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার জন্য খরচের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় কিছু কিছু মুহূর্তে উন্নত বা জটিল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অস্ত্রপচারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে তখনও খরচ বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশে যত ধরনের উন্নতমানের পরিষেবা রয়েছে তার বেশিরভাগই কেন্দ্র ঢাকাতে। অনেকগুলো হসপিটালে ব্রেনটিউমার অপারেশন করা হয়। অপারেশন খরচ সাধারণত ১ লক্ষ টাকা থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটিও নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় না আপনাদের নির্দিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্র এবং চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে।এজন্য অপারেশনের পূর্বে সঠিকভাবে খরচ সম্বন্ধে জানতে যোগ্যতা সম্পন্ন সার্জনের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এতে করে আনুমানিক একটা ধারণা পেতে পারেন।
অপারেশনের পরও বিভিন্ন খরচ সংযুক্ত করতে হয় যেমন হাসপাতালে থাকার সময়কাল যাবতই খরচ এবং অপারেটিভ এর পরবর্তী যত্নের প্রয়োজনীয়তার উপর প্রভাব ফেলে। সরকারিবা প্রাইভেট হাসপাতালে কেবিন নিলে খরচ বেশি, অবস্থানগত দিক দিয়ে খরচের মাত্রা ভিন্ন, ওষুধ, নার্সিং কেয়ার এবং ফলোআপ পরামর্শ বিষয়বলিতে খরচ খরচ ধার্য হয়।যারা ঢাকার বাইরে থাকে অর্থাৎ ভ্রমণএবং বাসস্থান ঢাকার বাইরে সেক্ষেত্রে তাদের খরচ অতিরিক্ত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে ব্রেন টিউমার অপারেশন খরচের পরিমাণ ভিন্নতা রয়েছে। কেননা ব্রেন টিউমার অপারেশনের খরচবিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বিষয়গুলো নিচে দেওয়া হল:
*অস্ত্রোপচার ধরণের উপর নির্ভর করে। যেমন: অশ্রপচার দুই ধরনের একটি হল ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার। ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে করা হয় অন্যটি হলো ওপেন অস্ত্রোপচার। ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে যে অস্ত্রোপচার করা হয় সেটির খরচ বেশি।
* অস্ত্রোপচার এর জটিলতা রয়েছে এক্ষেত্র খরচ বেশি হতে পারে।
* অবস্থানগত দিক থেকেও খরচ হতে পারে। যেমন: অপরেশনটি কোথায় করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে খরচ পরিবর্তন আসতে পারে।
* চিকিৎসা কেন্দ্রের বা হসপিটালের ধরন অনুযায়ী খরচের পরিমাণ কম বেশি হয়।সরকারি হসপিটালের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে খরচ বেশি। ২ লাখ থেকে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায়।
স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য নিচে কিছু খরচের তালিকা দেওয়া হলো
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আনুমানিক খরচের বিবরণ:
ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে ব্রেন টিউমার অপারেশনের খরচ৫লক্ষ টাকা থেকে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।ওপেন ব্রেন টিউমার অপারেশন খরচ ৪লক্ষ টাকা থেকে ৬লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
ঢাকা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বিবরণ:
ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে ব্রেন টিউমার অপারেশনের খরচ ৪ লক্ষ টাকা থেকে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।ওপেন ব্রেন টিউমার অপারেশন খরচ ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
এপেক্স হাসপাতালে বিবরণ:
ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে ব্রেন টিউমার অপারেশনের খরচ ৮লক্ষ টাকা থেকে১০লক্ষ টাকা পর্যন্ত।ওপেন ব্রেন টিউমার অপারেশন খরচ ৬ লক্ষ টাকা থেকে ৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
প্রথম ধাপ রোগ নির্ণয়
প্রথমত:চিকিৎসক নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। কারণ আপনার মানসিক অবস্থা ,স্মৃতিশক্তি এবং সামঞ্জস্য পরীক্ষা করতে হয় এ কারণে।
দ্বিতীয়ত:ইমেজিং পরীক্ষা করতে হয় ব্রেন টিউমার আকারের নমুনার জন্য। টিউমারে ক্যান্সারযুক্ত কোষ আছে কিনা এটি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে।
তৃতীয়ত: বায়োপসিস টেস্ট করতে হয় কেননা বায়োপসি টেস্ট এর মাধ্যমে বা এমআরআই সিটি স্ক্যান করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের টিউমারের অবস্থান অথবা আকার আকৃতির নির্ধারণ করা যায়।
ব্রেন টিউমারে কি ধরনের চিকিৎসা করা হয়
অপারেশন এর মাধ্যমে সাধারণভাবে টিউমারটিঅপসারণ করা হয়।দুই ধরনের অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
১. ক্রানিওটোমির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় এই চিকিৎসাটি হল মাথার খুলির একটি অংশ সরিয়ে টিউমারটি ধ্বংস করা হয়।
২. এন্ডোসকপি অপারেশনের মাধ্যমে টিউমারটি সরানোর জন্য নাকের ভিতর দিয়ে একটি ছোট ক্যামেরা এবং সরঞ্জাম ঢুকানো হয়
৩.উক্ত শক্তির এক্সরে বা আলোকরশ্নির মাধ্যমে টিউমারের কোষগুলোকে ধ্বংস করেও চিকিৎসা করা হয়। কোন রকম অপারেশন ছাড়া।
৪.কেমোথেরাপি দিয়ে অতিরিক্ত কোষ গুলো ধ্বংস করে চিকিৎসা করা হয়
অপারেশনের পরে পূর্ণবাসনের জন্য সময় লাগে কয়েক সপ্তাহ এবং রোগীর শারীরিক ও মানসিক কার্যাবলী উন্নত করতে অনেক সময় রোগীকে থেরাপির প্রয়োজন পড়ে।
ব্রেন টিউমার সনাক্তকরণের পর করণীয় কি
মাথায় সমস্যা দেখা দিলে বা শারীরিকভাবে অসুস্থ দেখা দিলে প্রথমত আপনাকে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে। এজন্য একজন নিউরোলজিস্ট বা নিউরো সার্জনের সাথে চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে। এরপরে আপনার লক্ষণ গুলি আস্তে আস্তে বর্ণনা করুন এবং আপনার চিকিৎসা ইতিহাস সম্পর্কে তুলে ধরুন।এরপরে চিকিৎসক আপনার বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করাবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা গুলোর জন্য নিয়মমাফিক নির্দেশবলিমেনে চলবেন।
চিকিৎসক যে সমস্ত পরীক্ষা দিতে পারে তার কিছু ধারণাবলি
নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা যা আপনার মানসিক অবস্থা স্মৃতিশক্তি এবংসামঞ্জস্য পরীক্ষা করা হবে।
পরবর্তীতে ইমেজিং পরীক্ষা করা হয় এটি হলো এমআরআই চৌম্বকীয় অনুকরণ ইমেজিং বা সিটিস্ক্যান নামে পরিচিত কম্পিউটার অবস্থান এবং আকার নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
বায়োপসি টিউমারের ছোট নমুনা পরীক্ষা করা হবে টিউমারে কোষগুলো কন্সরযুক্ত কিনা তা নির্ণয়ের জন্য।
কিছু বিশেষ বার্তা
এ সমস্ত রোগের জন্য মানসিক সমর্থন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এজন্য আপনি একজন থেরাপিস্ট কাউন্সিলরের সহায়তা নিতে পারেন। এছাড়াও পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। চিকিৎসা সময় রোগীর শরীরকে অনেক খারাপ পর্যায় নিয়ে যায় এজন্য শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাথে বিশ্রাম নেওয়া।
বাংলাদেশের ব্রেন টিউমার অপারেশন করা হয় হাসপাতালের তালিকা
সরকারিভাবে হাসপাতালে ও বেসরকারিভাবে হাসপাতালে ব্রেন টিউমার অপারেশন করা হয়ে থাকে।নিচে কতগুলো হাসপাতালের নাম করা হবে আপনাদের সুবিধা বা পছন্দ অনুযায়ী এখানেও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ইউনাইটেড হাসপাতাল ঢাকা
এপেক্স হাসপাতাল ঢাকা
সামরিক হাসপাতাল ঢাকা
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঢাকা
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামমেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রাম
ইমাম হাসপাতাল চট্টগ্রাম
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সিলেট
পার্বতী হাসপাতাল সিলেট
মহানগর হাসপাতাল সিলেট
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
পিপিসি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রাজশাহী
ব্রেন টিউমার বলতে কি বুঝায়
ব্রেন টিউমার হল একটি মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি ।যা টিউমার গুলোকে নিরপেক্ষ সৌম্য বা ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সারভুক্ত হয়ে থাকতে পারে।
ব্রেন টিউমার অপারেশন করতে কত সময় লাগে
ব্রেন টিউমার অপারেশন করতে তিন ঘন্টা থেকে ছয় ঘন্টা সময় লাগে এবং সুস্থ হতে ৪ সপ্তাহ থেকে ৬সপ্তাহ লাগে।
ব্রেন টিউমার হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়
মাথা ব্যথা করা, বমি বমি ভাব এবং বমি জ্বর, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন শারীরিক দুর্বলতা চোখের দৃষ্টির সমস্যা, খাদ্য অনিহা, শারীরিক দুর্বলতা ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসা করলেও কোন কিছু মনে রাখতে না পারা, হাঁটতে চলতে অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
টিউমার হলে কি মানুষ মারা যায়
ব্রেন টিউমার হলেই যে মানুষ মারা যাবে সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।এটি একটি নিয়মের উপর নির্ভর করে। ব্রেন টিউমার হল কিছু অস্বাভাবিক কোষ যা নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে বেড়ে যায়।একপর্যায়ে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত কোষ সৃষ্টি হয়ে যা ব্রেনকে প্রেসার দিয়ে থাকে তাকে ব্রেন টিউমার বলে।ব্রেন টিউমার শুধুমাত্র মস্তিষ্কে হয় তেমন না শরীরের যে কোন অংশে তৈরি হতে পারে তারপর মস্তিষ্কের ছরাতে পারে। টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
প্রথমটি বেনাইন টিউমার যেটি আস্তে আস্তে বাড়ে।মস্তিষ্কের সব জায়গায় ছড়ায় না কখনো কখনো আকৃতি বড় ধরনের হয়ে থাকলে টিউমার চাপে মস্তিষ্কের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে।এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তবে রোগী মারা যায় না। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। আর এক ধরনের টিউমার ক্যান্সার হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে ও দ্রুতই মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এক্ষেত্রে একটু সময়ের ভিতর বৃদ্ধি হয়ে যায় যার ফলে রোগী মারা যেতে পারে।
আরো স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলতে গেলে ব্রেন টিউমার প্রধানত ভাবে দুই ধরনের। প্রথম টির নাম হল বেনাইন টিউমার এটিতে ক্যান্সার হয় না এবং দ্বিতীয়টির নাম হল ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার জাতীয় টিউমার।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার জাতীয় টিউমার। আবার দুই ধরণের। ১.ম্যালিগন্যান্ট যা মস্তিষ্কের ভিতর থেকে উৎপত্তি হয়।
২.মেটাস্টিক টিউমার যা শরীরের ভিতর যে কোন অংশে হতে পারে এবং পরবর্তীতে তা অন্য জায়গায় উৎপন্ন হয়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।